
স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনটে ভুল তথ্য প্রদান এবং ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা লঙ্ঘনের কারণে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও অবৈধভাবে সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এবিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগি বৈধ সেচ পাম্পের মালিক বেল্লাল হোসেন। অবশেষে তিনি ধুনট উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব সহ ৮ জনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার ধুনট মডেল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বাটিকাবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল সেখের ছেলে কৃষক বেল্লাল হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতায় ধুনট উপজেলা সেচ কমিটি থেকে সেচ পাম্পের লাইসেন্স নিয়ে চৌকিবাড়ি মৌজার ৩২৭/৫১৮নং খতিয়ানের ১৫০৪নং দাগের ১০ শতক জমিতে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প স্থাপন করি এবং ওই এলাকার ৭৩ বিঘা জমিতে পানি সেচ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি।
কিন্তু ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর বাটিকাবাড়ি গ্রামের রসুল খানের ছেলে সুলতান মাহমুদ ভুল তথ্য প্রদান করে উপজেলা সেচ কমিটি থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে আমার জমির পাশেই অন্য আরেকজনের জমিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে সেচ পাম্প স্থাপন করেন। সুলতান মাহমুদের কোন ফসলী জমি না থাকলেও ভুল তথ্য প্রদান এবং অন্যের স্কিমের মধ্যে পাম্প স্থাপন করার কারনে ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর ধুনট উপজেলা সেচ কমিটির তৎকালীন সদস্য সচিব বিএডিসি কর্মকর্তা আসমাউল বিন হোসেন তার সেচ লাইসেন্স বাতিল করেন।
ভুক্তভোগি কৃষক বেল্লাল হোসেন বলেন, সেচ লাইসেন্স বাতিল হওয়ার তিনদিন পর ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সুলতান মাহমুদের সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। কিন্তু গত ৪ মাস আগে সুলতান মাহমুদ ধুনট পল্লী অফিসে ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়। এবিষয়ে বগুড়া ও ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস, বিএডিসি সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিএডিসি অফিস ও বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ-২ লিখিতভাবে ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে ওই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মালামাল অপসারন করতে চিঠি দেয়। কিন্তু তারপরও ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ঘুষের বিনিময়ে সুলতান মাহমুদের নামে সেচ পাম্পের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগটি বহাল রেখেছে।
তাই নিরুপায় হয়ে ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট বগুড়ার আদালতে বাটিকাবাড়ি গ্রামের সুলতান মাহমুদ, উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সদস্য সচিব বিএডিসি কর্মকর্তা, সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তাকে বিবাদী করে মামলা দায়ের বেল্লাল হোসেন। তাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ওই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা সেচ কমিটির বর্তমান সদস্য সচিব বিএডিসি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক দাগে লাইসেন্স নিয়ে অন্য দাগে স্কিম চলমান রাখার কারনে সুলতান মাহমুদের সেচ পাম্পের লাইসেন্সটি বাতিল করে পল্লী বিদ্যুৎকে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে কেন তারা সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করছেন না এবিষয়টি জানা নেই।
তবে এবিষয়ে ধুনট পল্লী বিদ্যুতের এজিএম শামছুল হক বলেন, ফাইলপত্র দেখে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা সেচ কমিটির বর্তমান সভাপতি ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি, তাই বিষয়টি জানা নেই। তবে লাইসেন্স বাতিল হলে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করার কথা। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেয়া হবে।