বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :

হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা নামে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জাম সংকটের কারণে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ৭ জন করোনা রোগী মারা গেছে।

সংকটাপন্ন রয়েছে আরও ১০ জন। চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন না পাওয়ায় ওই হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০০ শয্যার ওই হাসপাতালে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২২৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। যাদের অধিকাংশেরই উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালটিতে বর্তমানে মাত্র দু’টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থাকায় দু’জনের অতিরিক্ত আর কোন রোগীকে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন (রক্তে ঘনীভুত অক্সিজেনের মাত্রা) ৮৭ এর নিচে তাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

বগুড়ার ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে ২০২০ সালের মার্চের শেষ দিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। তখন সেখানে সিলিন্ডার দিয়ে করোনা রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হতো। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়লে একই বছরের জুনের শেষ দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত ৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়।

পরবর্তীতে শজিমেক হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩টি আইসিইউসহ ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সেখানেও রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চলতি বছরের এপ্রিলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হয়।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু হলেও সবগুলো শয্যায় উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যুক্ত করা হয়নি। এমনকি ৮ শয্যা নিয়ে চালু করা আইসিইউ ইউনিটেরও মাত্র ২টিতে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে।

ফলে পুরো হাসপাতালের মধ্যে আইসিইউ ইউনিটের ওই দুটি শয্যায় কেবল উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন সররবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। এর বাইরে ভর্তি দুই শতাধিক রোগীকে হয় ফেস্ক মাস্ক অথবা রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে।

করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে ফেস্ক মাস্ক দিয়ে একজন করোনা রোগীকে প্রতি মিনিটে মাত্র ৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব। অন্যদিকে রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। আর হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে একজন রোগীকে প্রতি মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন দেওয়া যায়।

ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর ওপরে কেবল তাদের ফেস্ক মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে সারিয়ে তোলা সম্ভব। আর যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর নিচে কিন্তু ৮৭ এর ওপরে তাদের রিব্রিদার মাস্ক দিয়েও সুস্থ করে তোলা যায়। তবে যাদের অক্সিজেনের মাত্রা ৮৭-এর নিচে তাদের জন্য অবশ্যই উচ্চ মাত্রার অর্থাৎ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাযুক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন। তাছাড়া তাদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

২০০ শয্যার ওই হাসপাতালে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২২৩জন রোগী ভর্তির তথ্য নিশ্চিত করে তিনি আরো জানান, ‘আমাদের এই হাসপাতালে এখন যেসব রোগী আসছেন তাদের বেশিরভাগেরই অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬০ থেকে ৭২-এর মধ্যে। তাদের হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করা প্রয়োজন।

কিন্তু আমাদের হাসপাতালে শুধু আইসিইউ ইউনিটের দু’টি শয্যায় ওই ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে বিপুল সংখ্যক রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অক্সিজেন সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তের ঘন্টায় ৭জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও অন্তত ১০জনের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।’

বিষয়টি সিভিল সার্জন ডাঃ গাওসুল আজম ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান তুহীনকে ফোনে যোগাযেগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।