ধুনটে ঘুষ নিয়ে গোপনে নিয়োগ দিতে প্রার্থীদের নিয়ে উধাও প্রধান শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা : ধুনট
বগুড়ার ধুনটে ঘুষের বিনিময়ে গোপনে নিয়োগ দিতে পছন্দের প্রাথীদের সঙ্গে নিয়ে উধাও হয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। একারনে নিয়োগ পরীক্ষার দিন রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চাকুরি প্রত্যাশীরা নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে বিদ্যালয় চত্বরে দীর্ঘ অপেক্ষার পর এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে চাকুরী প্রত্যাশী গোপালনগর ইউনিয়নের বিশারদিয়াড় গ্রামের মাসফিকুর রহমান, গোপালনগর গ্রামের ইউছুব আলী, জাহিদুল ইসলাম, গোপাল কুমার, শিহাব উদ্দিন ও ডিগ্রির চর গ্রামের আশরাফুল আলম সহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

চাকুরী প্রত্যাশী ইউছুব আলী জানান, ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর একটি পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে গোপালনগর আজিরন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবসৃষ্ট পদে একজন নিরাপত্তা কর্মী এবং একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আহবান করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ি নিরাপত্তা কর্মী পদে আমি সহ ১৬ জন এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৪ জন আবেদন করেন।

আবেদনপত্র যাছাই বাছাইয়ে সকল প্রার্থীদের আবেদন বৈধ ঘোষণা করা হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসমত আলী শেখ ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী নিরাপত্তা কর্মী পদে নিয়োগ পরীক্ষা নিতে শুধুমাত্র ১২ জন প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেন। প্রধান শিক্ষক আসমত আলী সেখের স্বাক্ষরিত নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহনের দিন ধার্য ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টায় এবং স্থান হিসেবে গোপালনগর আজিরন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু পরীক্ষা গ্রহনের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারী প্রধান শিক্ষক আসমত আলী ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষার পরিবর্তে অন্যত্র নিয়ে যায়। এদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিদ্যালয় চত্বরে অবস্থান করে প্রার্থীরা। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রধান শিক্ষক সহ কাউকে না পেয়ে অবৈধ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে চাকুরি প্রত্যাশীরা সহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

এরআগে শনিবার ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আরেক চাকুরি প্রত্যাশী গোপালনগর গ্রামের আফসার আলীর ছেলে আশরাফুল আলম।

চাকরি প্রার্থী আশরাফুল অভিযোগ করে বলেন, ৯ লাখ টাকার চুক্তিতে প্রধান শিক্ষক আসমত আলী শেখ আমাকে নিরাপত্তা কর্মী পদে চাকুরি দিতে চেয়েছিলেন। তাই আবেদন করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা দিতে অস্বীকার করলে তিনি আমাকে সহ ৪ জন প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেননি। পরে আমরা জানতে পারি প্রধান শিক্ষক মথুরাপুর ইউনিয়নের তার এক আত্মীয়কে বেশি টাকার বিনিময়ে চাকরি দিচ্ছেন। একারনে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার থাকলেও ঘুষ নিয়ে গোপনে নিয়োগ দিতে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে প্রধান শিক্ষক উধাও হয়ে গেছেন।

তবে এব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষক আসমত আলীর মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, গোপনে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।