ঠাকুরগাঁওয়ে দুর্গাপূজায় বাড়তি আয়ের আশায় দিন গুনছেন ঢোলিরা

আপেল মাহমুদ, ঠাকুরগাঁও থেকে :
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হতে যাচ্ছে আর মাত্র বাকি কয়টা দিন। পূজার চারদিন যাদের উপস্থিতি পূজাকে করে তোলে প্রাণবন্ত, সেই ঢোলিরা এখন বাড়তি আয়ের আশায় পূজার দিন গুনছেন।

ঢাক ঢোল বাজানোর মোটা টাকা পেতেন। সেই টাকায় পরিবারের লোকেরা কিছুটা হলেও শান্তিতে পূজার কয়টা মাস কাটাতো। কিন্তু গত ১৮ মাস ধরে করোনা সংক্রমণ এবং লকডাউনের কারণে দিশেহারা অবস্থা ঢোলিদের। ঢাক বাজানো বন্ধ হয়ে যাবার কারণে এখন কেউ শ্রমিক। করোনা কালীন কেউ অটো চালিয়েছেন। কেউ সারাবছর রিকশা চালিয়ে সংসার টেনেছেন। তবে পূজা মৌসুমের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

ঢোলার হাট মৌজার নামানুসারে ইউনিয়নের নাম রাখা হয়েছে ঢোলার হাট ইউনিয়ন। কথিত আছে, এ গ্রামে ঢোলারদের হাট বসত। তাই এ নাম রাখা হয়েছে। কয়েক পুরুষ ধরে পূজার মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক ঢোল বাজানোই মুলত তাদের পেশা। তবে করোনার কবলে তাও বন্ধ ছিল। চলতি বছরে এবার ঢাক ঢোল বাজানোর বায়না আসছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। ফলে বাড়তি রোজগারের আশায় পূজার দিন গুনছেন ঠাকুরগাঁও সদরের ঢোলার হাট এলাকার ঢোলিরা।

তাকে তুলে রাখা ঢোল নামিয়ে চলছে ঝাড়া, মোছা। ঢোলের চামড়া রোদে শুকিয়ে নিয়ে টান টান করে বেঁধে ফের কাঁধে নিয়ে শুরু হয়ে গেছে মহড়া। সদরের রুহিয়া থানাধীন ঢোলারহাট এলাকার যতীন্দ্র নাথ বর্মন, মমেন দাস, দিলীপ দাস, রতন দাস, মানিক, বিপুল দাসের মতো ঢোলিদের এ বার পূজায় ডাক পড়ছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে। বায়না হয়ে গেলে সেখানকার দুর্গাপূজার ঢাক ঢোল বাজাতে যেতে হবে।

যতীন্দ্র নাথ বর্মন, মমেন দাস জানিয়েছেন, সারা বছর টুকটাক পূজায় বায়না পেলেও দুর্গাপূজার সময়ে তাদের আয় ভাল হয়। বোদা, দেবীগঞ্জ, ডোমার, বীরগঞ্জ উপজেলা বা দিনাজপুর জেলা থেকে পূজায় ঢাক বাজানোর বায়না আসে। অনেকে আবার ঠাকুরগাঁও শহর অথবা রোড স্টেশন থেকেও বায়না পেয়ে যান। তাই শারদোৎসবের দিকে তারা তাকিয়ে থাকেন সারা বছর। তবে করোনা মহামারীর কারণে অন্য অঞ্চলে যাওয়া হয়নি। মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে ঢাক ঢোল বাজানো হয়নি। ফলে গত বারের পূজায় উৎসব রংহীন হয়ে গিয়েছিল। করোনা থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে, তা জানা নেই। তাই ঢোল, বোল, তোলা ছেড়ে রিকশা, অটো চালিয়ে গোটা বছর রোজগার করছেন দিলীপ দাসেরা।

কিন্তু এবার আশার আলো দেখছেন তারা। মানিক দাস বলেন, “প্রতি বারই পূজার সময় বিভিন্ন এলাকায় ঢাক ঢোল বাজাতে যাই। গত বছর যাওয়া হয়নি। এ বারও করোনার প্রকোপ রয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও ঢাক ঢোল বাজানোর ডাক এসেছে। পূজার সময় দুইটা বাড়তি টাকা হাতে আসবে। না হলে সারা বছর রিকশা চালিয়ে কোনও মতে সংসার চলে।” তবে বায়না পেলেও দুশ্চিন্তা কাটেনি। অনেকেরই এখনও করোনার টিকা নেওয়া হয়নি। রতন দাস নামে আর এক ঢোলি বলেন, “এখনও টিকা নেওয়া হয়নি। তাই নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। তারপরও এ বার অন্তত পূজার দিনগুলোতে ঢোলের কাঠিতে তাল তুলতে পারব। তারই প্রস্তুতি চলছে।”

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় গতবছর ১৯৮টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়েছিল।