মা’ মাছ নিধন

আপেল মাহমুদ, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :

বর্ষার শুরুতেই ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়ার নদী-নালা, খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট ছেয়ে গেছে চায়না জালে (রিং জাল)। আর এসব জাল দিয়ে প্রাকৃতিক উৎসে ডিম দিতে আসা মা ও পোনা মাছ নিধন করছেন স্থানীয়রা। উপজেলার সর্বত্র স্বল্প পানিতে দেখা যাচ্ছে এই জাল। জালের মালিকরা বলছেন, এমন কোনো মাছ নেই যা এই জালে ধরা পড়ে না।

তবে মৎস্য কার্যালয় বলছে, এই জাল সর্বনাশা। এটা বন্ধ করা হবে। রুহিয়া থানাধীন উত্তর বঠিনা, চুয়ামনি, আসাননগর, টাঙ্গন ব্যারেজ, বড়দেশ্বরী, সেনুয়া গ্রাম ঘুরে সারি সারি চায়না জাল দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যেখানেই একটু পানি জমেছে সেখানেই এই জাল পাতা হচ্ছে। আর অবাধে ডিমওয়ালা দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস মাছের প্রজননকাল।

চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না। যার ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পোনা মাছও ধরা পড়ছে এই জালে। এভাবে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছ ধরলে মাছের অভাব দেখা দেবে। উত্তর বঠিনা গ্রামের সাদ্দাম বলেন, পানিতে যদি মাছ থাকে তবে চায়না জালে তা ধরা পড়বে। লোহার রডের সঙ্গে পেঁচিয়ে বিশেষভাবে তৈরি বর্গাকৃতির এই ঘন জালটি মাছের জন্য সর্বনাশা ফাঁদ।

উত্তর বঠিনা গ্রামের আব্বাস বলেন, এই জালের দাম একটু বেশি হলেও পোষায়। এত মাছ অন্য কোনো জালে ধরা পড়ে না। আসাননগর গ্রামের খইরুল ইসলাম চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার ঝুড়িতে ছোট পোনা থেকে শুরু করে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি লম্বা টাকি মাছও দেখা যায়। এসব মাছের অধিকাংশই ডিমওয়ালা।

ডিমওয়ালা মাছ ধরা ঠিক কি না জানতে চাইলে খইরুল বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সংসার চালানোর জন্য মাছ ধরি। ভালো-মন্দ বুঝি না। স্থানীয়রা বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষ কর্মহীন হওয়ায় এসব মাছ ধরা আরো বেড়েছে। আগে যেসব লোক অন্য কাজকর্ম করে ব্যস্ত সময় পার করতেন, এখন তারা এসব মাছ ধরছেন। আসাননগর গ্রামের গনি মিয়া দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করেন। মাছ কখন ডিম ছাড়ে এটি তিনি ভালো করে খেয়াল রাখেন। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে যে মাছ ধরতে হয় না তা তিনি মেনে চলেন।

গনি মিয়াকে চায়না জাল সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন, যারা প্রকৃতপক্ষে মাছের কারবার করেন কিংবা মাছ ধরা যাদের বংশগত পেশা, তারা কখনো এই জাল দিয়ে মাছ ধরবেন না। শুধু মৌসুমি শিকারিরাই এমন সর্বনাশা কাজ করতে পারেন। রুহিয়া বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বাঘা বলেন, এখন চায়না জাল দিয়ে যেভাবে গুঁড়া মাছ ধরা হচ্ছে, তাতে শুষ্ক মৌসুমে মাছের তীব্র আকাল হবে। বাঘা দ্রুত এই জাল নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

আরেক ব্যবসায়ী আমান আলী বলেন, এখন যারা চায়না জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরে টাকা রোজগার করছে, তারাই একসময় আফসোস করবে। উপজেলার বাজার গুলোতে চায়না জাল (রিং জাল) বেচে কেনা হয় না।

তবে, রুহিয়া থানাধীন রাজাগাঁও ইউনিয়নের উত্তর বঠিনা গ্রামের কিছু অসাধু ব্যবসায়ি ঘরোয়া ভাবে চায়না জাল বিক্রি করছে বলে একাধিক জেলে জানিয়েছে। চায়না জালের বড় ব্যবসায়ী ফারুক। তিনি জানান, বর্তমানে চায়না জালের খুব চাহিদা। একজন ক্রেতা কমপক্ষে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট জাল ক্রয় করেন।

এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছা: আয়েশা আক্তার বলেন, চায়না জাল, কারেন্ট জালসহ যে জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরা হয় সেসব জাল আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। সর্বনাশা এই জাল বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।