ধুনটের বউ মেলায় উপচেপড়া ভিড়

``৭০তম এই বউ মেলায় এবারও ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়''

ধুনটের ‘বউ মেলায়’ উপচেপড়া ভিড়
বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীর তীরে শতাব্দি প্রাচীন ‘বউ মেলা’য় কেনাকাটায় ব্যস্ত মহিলারা। -অনুসন্ধানবার্তা

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
সকল অপশক্তি বিনাস করে কল্যান প্রতিষ্ঠায় দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বগুড়ার ধুনটে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা।

প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বুধবার (০৫ অক্টোবর) ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া গ্রামের ইছামতি নদীর তীরে এবারও বসেছিল শতাব্দি প্রাচীন ‘বউ মেলা’। ৭০তম এই বউ মেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।

তবে এই মেলায় শুধুমাত্র মহিলারাই প্রবেশ করতে পারে। মেলাটিতে পুরুষদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। মেলার প্রধান ফটকে মহিলা স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়োজিত থাকে। একারনে মহিলারা স্বাচ্ছন্দে কেনা-কাটা করতে পারে। তাই যুগ যুগ ধরে এই মেলাটির নামকরণ হয়েছে ‘বউ মেলা’ নামে। এ মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

প্রতীমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে দূরদূরান্ত থেকে হরেক রকমের দোকানীরা এসে ইছামতি নদীর তীরে পণ্যের পসরা সাজায়। এসব দোকানগুলোকে ঘিরে মেলা বসতে শুরু করে।

প্রতীমা বিসর্জনকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকে দোকানীরা পসরা সাজিয়ে বসে মেলায়। দুপুর গড়াতেই মেলায় সমাগম ঘটতে থাকে হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের।

তবে যুগ যুগ ধরে ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীতে ৫/৭টি মন্দিরের প্রতীমা একসঙ্গে বিসর্জন দেয়া হলেও কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় গত দুই বছর ধরে শুধুমাত্র সরকারপাড়া মন্দিরের প্রতীমাই বিসর্জন দেয়া হয়।

ধুনট সদর থেকে পূর্ব দিকে মেলার দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। মেলায় প্রবেশ করতেই দেখা মেলে, গ্রামীন সড়ক জুড়ে মানুষের কোলাহল। শিশুর হাতে মেলার বাঁশি। হাওয়ায় ভাসা রঙ্গিন বেলুন। নব সাঁজে বঁধুর ঘোমটার ফাঁক দিয়ে উকি মারছে সিথির সিঁদুর। ইছামতি নদীর তীর ঘেঁষা গ্রামটি যেন হঠাৎ করেই জেগে ওঠে কোন এক অজানা পরশে।

তবে মেলায় হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন আসে ভক্তি আর মানত নিয়ে। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকজন আসে আনন্দ আর উৎসব করতে। দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখাই এই মেলার প্রধান আকর্ষন। বুধবার বিজয়া দশমীতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ৭০তম এই ‘বউ মেলার’ সমাপ্তি ঘটে।

মেলায় আগত ক্রেতা আরতি রানী জানান, শেরপুর উপজেলা থেকে এসেছেন এই বউ মেলায়। মেলার ভিতরে কোন পুরুষ লোক না থাকায় অনেক স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করেছেন এবং দামও কিছুটা কম ছিল বলে জানান।

আরো পড়ুন- ধুনটের পূজা মন্ডপে এমপির আর্থিক সহায়তা প্রদান

মেলার দোকানী মর্জিনা বেগম জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বগুড়া থেকে ধুনটের এই বউ মেলায় এসেছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর বউ মেলায় ক্রেতাদের অনেক ভীড় ছিল। তাই বেচা-বিক্রিও ভাল হয়েছে।

সরকারপাড়া বউ মেলা কমিটির সভাপতি নিতাই চন্দ্র দেব জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঐতিহ্যবাহী বউ মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। তাই এই মেলা ও পূজা উদযাপনের জন্য স্বেচ্ছাসেবী কর্মী, পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা নিয়োজিত ছিল।

ধুনট পৌরসভার মেয়র এজিএম বাদশা জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই বউ মেলা। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আগত হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগমে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গন।

ধুনট উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ বিকাশ চন্দ্র সাহা জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই উপজেলার পৌরসভা সহ ১০টি ইউনিয়নে ২৯টি মন্দিরে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ধুনট থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আসাদুজ্জামান জানান, প্রতিটি পূজা মন্ডপেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নজরদারি ছিলো।

…………………।।

ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে চোখ রাখুন ‘অনুসন্ধানবার্তা’ ইউটিউব চ্যানেল। অজানা সব ভিডিও দেখতে চ্যানেলটি এখনই সাবক্রাইব করে আমাদের সঙ্গেই থাকুন-