ধুনটের ‘বউ মেলায়’ এবারও ছিল উপচেপড়া ভীড়

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :
সকল অপশক্তি বিনাস করে কল্যান প্রতিষ্ঠায় দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বগুড়ার ধুনটে সমাপ্ত হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। এবছর এই উপজেলার ৩৬টি মন্দিরে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে শুক্রবার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া গ্রামের ইছামতি নদীর তীরে এবারও বসেছিল ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা। ৬৯তম এই বউ মেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড়।

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা আর নানা আনন্দ আয়োজনে দেবী দূর্গা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এক দিনের এই বউ মেলার অনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

যুগ যুগ ধরে ধুনট সদরপাড়া, দাসপাড়া, কলেজপাড়া ও সরকারপাড়া সহ আশপাশের পূজা মন্ডপের প্রতীমা সরকারপাড়া ইছামতি নদীতে বিসর্জন দেওয়া হতো। প্রতীমা বিসর্জন ঘিরে দূরদূরান্ত থেকে হরেক রকমের দোকানীরা এসে ইছামতি নদীর তীরে পণ্যের পসরা সাজায়। এসব দোকানগুলোকে ঘিরে মেলা বসতে শুরু করে।

তবে এই মেলায় শুধুমাত্র মহিলারাই প্রবেশ করতে পারে। মেলাটিতে পুরষদের প্রবেশ ঠেকাতে প্রধান ফটকে মহিলা স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়জিত থাকে। একারনে মহিলারা স্বাচ্ছন্দে কেনা-কাটা করতে পারে। তাই যুগ যুগ ধরে এই মেলাটির নামকরণ হয়ে আসছে ‘বউ মেলা’ নামে। এ মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

তবে যুগ যুগ ধরে ইছামতি নদীতে ৫/৭টি মন্দিরের প্রতীমা বিসর্জন দেয়া হলেও কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় এবছরই প্রথম শুধুমাত্র সরকারপাড়া মন্দিরের প্রতীমাই বিসর্জন দেয়া হয়েছে।

প্রতীমা বিসর্জনকে ঘিরে শুক্রবার দুপুর ২ টা থেকে দোকানীরা পসরা সাজিয়ে বসে মেলায়। দুপুর গড়াতেই মেলায় সমাগম হতে থাকে হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের।

ধুনট সদর থেকে পূর্ব দিকে মেলার দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। মেলায় প্রবেশ করতেই দেখা মেলে, গ্রামীন সড়ক জুড়ে মানুষের কোলাহল। শিশুর হাতে মেলার বাঁশি। হাওয়ায় ভাসা রঙ্গিন বেলুন। নব সাঁজে বঁধুর ঘোমটার ফাঁক দিয়ে উকি মারছে সিথির সিঁদুর। ইছামতি নদীর তীর ঘেঁষা গ্রামটি যেন হঠাৎ করেই জেগে ওঠেছে কোন এক অজানা পরশে।

তবে মেলায় হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন আসে ভক্তি আর মানত নিয়ে। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকজন আসে আনন্দ আর উৎসব করতে। দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখাই এই মেলার প্রধান আকর্ষন। শুক্রবার বিজয়া দশমীতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ৬৯তম এই ‘বউ মেলার’ সমাপ্তি ঘটে।

মেলায় আগত ক্রেতা পপী রানী জানান, পাশ^বর্তী কাজিপুর উপজেলার সোনামুখি গ্রাম থেকে এসেছেন এই বউ মেলায়। মেলার ভিতরে কোন পুরুষ লোক না থাকায় অনেক স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করেছেন এবং দামও কিছুটা কম ছিল জানান।

মেলার দোকানী চাঁন মিয়া বলেন, রংপুর থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ধুনটের এই বউ মেলায় এসছি। গত বছরের তুলনায় এবছর বউ মেলায় ক্রেতাদের অনেক ভীড় ছিল। তাই বেচা-বিক্রিও ভাল হয়েছে।

ধুনট সরকারপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবু পার্থ কুমার সেন জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঐতিহ্যবাহী বউ মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড় ছিল লক্ষ্যনীয়। তাই এই মেলা ও পূজা উদযাপনের জন্য ৩৫ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবী কর্মী, পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও ধুনট পৌর মেয়র সহ কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক বৃন্দবৃন্দ সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।

ধুনট পৌরসভার মেয়র এজিএম বাদশা জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই বউ মেলা। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আগত হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগমে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গন।

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) জাহিদুল হক জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধুনট উপজেলার ৩৬টি পূজা মন্ডপের প্রতীমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।