নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনট সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ধুনট সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর ও ধুনট বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় কয়েক দফা পৃথক এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ২০/২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া সংঘর্ষে সম্মেলনস্থলের চেয়ার-টেবিল ও মোটরসাইকেল ভাংচুরেরও ঘটনা ঘটেছে।

জানাগেছে, আগামী সম্মেলনকে ঘিরে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি টিআইএম নূরুন্নবী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকনের সঙ্গে স্থানীয় এমপি হাবিবর রহমানের অনুসারী নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।

এই বিরোধের জের ধরে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দুই গ্রুপের মধ্যে একটিতে নেতৃত্ব দেন নূরুন্নবী তারিক ও অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় এমপি হাবিবর রহমান।

এদিকে গ্রুপিং এর কারনে অনাস্থা ও বহিস্কারে ছড়াছড়িতে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগ এখন দুটি পৃথক কমিটি দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। এক কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন টিআইএম নূরুন্নবী তারিক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন।

অপরদিকে অনাস্থা জ্ঞাপনের পর আওয়ামীলীগের অপর কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে রয়েছেন গোলাম সোবাহান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন মহসীন আলম। ওই দুটি কমিটির নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথকভাবে ১০টি ইউনিয়নের ওয়ার্ড সম্মেলন করে আসছেন। প্রতিটি ওয়র্ডেই ওই দুটি গ্রুপের পৃথক দুটি কমিটি গঠিত হচ্ছে।

এই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকাল ১১টায় ধুনট সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ৫,৬,৭,৮,৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলনের আয়োজন করেন নূরুন্নবী তারিক ও আব্দুল হাই খোকন।

অপরদিকে ওই ইউনিয়ন পরিষদের পাশ^বর্ত্তী মাটিকোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পাল্টা সভা আহবান করেন এমপি গ্রুপের পক্ষে গোলাম সোবাহান ও মহসীন আলম।

এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয় সকাল থেকেই। উভয় গ্রুপের লোকজনই মোটরসাইকেলে লাঠিশোডা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মহড়া দেয়।

বুধবার সকাল ১১টার দিকে এমপি গ্রুপের পক্ষের নেতাকর্মীরা মাটিকোড়া স্কুল থেকে মিছিল নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আয়োজিত তারিক গ্রুপের সম্মেলনস্থলে হামলা চালিয়ে চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে এবং কয়েক নেতাকর্মীকে আহত করে চলে যায়।

পরে সংবাদ পেয়ে তারিক গ্রুপের লোকজন অন্য রাস্তা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছে এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে সম্মেলন শেষ করেন। সেই সময় এমপি গ্রুপের লোকজন আবারও ইউনিয়ন পরিষদের দিকে যেতে চাইলে ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত ও ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধুর নেতৃত্বে পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।

এরপর এমপি গ্রুপের লোকজন মাটিকোড়া থেকে ধুনট বাজারে যাওয়ার পথে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নূরুন্নবী তারিকের বাসার সামনে পৌঁছালে আবারও দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে। তখন দুই গ্রুপের লোকজনের হাতেই ধারালো অস্ত্রসহ লাঠিশোডা ছিল। সংঘর্ষে উভয় পক্ষেরই প্রায় ২০/২৫জন নেতাকর্মী আহত হয়। এছাড়াও কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাংচুর করা হয়।

এব্যাপারে নুরুন্নবী তারিক বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ি আগামী ২০ তারিখের মধ্যে ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলন শেষ করতে হবে। একারনে ধুনট সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ওয়ার্ড সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু এমপির লোকজন সম্মেলনস্থল ভাংচুর করে এবং কয়েক নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে। এরপর আমরা সংঘাত এড়াতে অন্য রাস্তা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছে সম্মেলন শেষ করে চলে আসি। এরপরও এমপির লোকজন আবারও হামলা চালালে দলীয় নেতাকর্মীরা তাদেরকে প্রতিহত করে।

তবে এব্যাপারে মহসীন আলম বলেন, সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের কারনে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সংখ্যা গড়িষ্ঠ নেতাকর্মীরা সভাপতি নূরুন্নবী তারিক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকনের ওপর অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। এরপর সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ি সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সোবাহানকে আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আমি মহসীন আলমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করছি। কিন্তু নূরুন্নবী তারিক ও আব্দুল হাই খোকন অবৈধভাবে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে গেলে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা তাদেরকে প্রতিহত করেন।

এব্যাপারে স্থানীয় এমপি হাবিবর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দন চলে আসছে। কিন্তু এসব কোন্দল নিরসনে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে স্বভাবিক রয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।