ধুনটে গরীবের ২ শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :

বার বার যমুনার ভাঙ্গনে পৈত্রিক ভিটেমাটি হারিয়ে সামান্য কয়েক শতক জায়গা কিনে বসবাস করছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া গ্রামের দিনমজুর আকবর আলী। প্রায় ১৫ বছর আগে তার বাড়ির পাশেই ১০ শতক জমিতে ইউকিল্যাপটাস, মেহগনি ও শিমুল গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০টি গাছ রোপন করেছিলেন। গাছগুলো বর্তমানে বিক্রির উপযুক্ত হয়েছে।

আকবার আলী ও অবিরন দম্পতির স্বপ্ন ছিল গাছগুলো বিক্রি করে তাদের মেয়েটাকে বিয়ে দিবেন। কিন্তু তাদের ১৫ বছরের লালিত সেই স্বপ্নগুলো একদিনেই কেড়ে নিয়ে গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

জোর করে কেটে নিয়েছে এই দরিদ্র পরিবারের ৫০টি গাছ। যার মূল্য ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। গাছের শোকে বুক ফাঁটা আর্তনাতে ফেটে পড়ছে আকবার আলী ও অবিরন দম্পতি।

আকবর আলী ও অবিরন বেগম জানান, গত শনিবার নেতাকর্মীরা জোর করে তাদের গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছে। তবে কারা গাছগুলো কেটে নিয়েছে জানতে চাইলে বলেন, তারা খুব প্রভাবশালী। তাদের নাম বললে এলাকায় থাকতেও পারব না।

তবে শুধু আকবর আলী ও অবিরন বেগমেরই গাছ কাটেননি, তাদের মতো হতদরিদ্র লাল ভানুর ৩০টি গাছ, রিকসা চালক হযরত আলীর ২৫টি গাছ ও দরিদ্র কৃষক আশরাফ আলীর ৭০টি গাছ সহ সরকারি খাস জমির মোট ২ শতাধিক গাছ দিনে দুপুরে কেটে নিয়ে গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া গ্রামে সরকারী খাস ১০৩ শতক জমিতে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ৪৩টি বাড়ি নির্মানের জন্য জায়গা নির্ধারণ করেন ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরকত উল্লাহ্।

এদিকে জায়গা নির্ধারনের পর ব্যক্তিগত গাছগুলো কর্তন করতে স্থানীয়দের নির্দেশ দেন এবং সরকারী জমির গাছগুলো নিলামের উদ্যোগ নেন ইউএনও।

কিন্তু ইউএনও’র নির্দেশনা অমান্য করে এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সরকারী জমির গাছ সহ ব্যক্তি মালিকানাধীন ২ শতাধিক গাছ কর্তন করে বিক্রি করে দিয়েছে।

তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় লোকজন জানায়, ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত সরেজমিন পরিদর্শন করে সরকারি জায়গা নির্ধারন করে ব্যক্তি মালিকানা গাছগুলো কর্তনের নির্দেশ দেন।

কিন্তু এর একদিন পরেই শুক্রবার (৬ আগষ্ট) ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ্ স্বপনের নেতৃত্বে গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম সহ তাদের লোকজন জোর করে সরকারি জায়গার গাছ সহ ব্যক্তি মালিকানা প্রায় ২ শতাধিক গাছ কর্তন করেছে। যার মূল্য প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো।

তবে এবিষয়ে ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন ও গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে তাদের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে আমরা শুধু ভূমিহীনদের ঘর নির্মানে সহযোগিতা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গাছ কর্তনের সঙ্গে তাদের কোন সম্পৃত্তা নেই বলে তারা দাবি করেন।

এব্যাপারে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মানের জন্য জায়গা নির্ধারন করে ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ কর্তন করতে বলা হয়েছে এবং সরকারি জমির জমির গাছগুলো নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু কে বা কারা এই গাছগুলো কর্তন করেছে। তাই এবিষয়ে ধুনট থানায় একটি জিডি দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এবিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ভূমি অফিস থেকে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

তবে প্রাথমিক তদন্তে ছাত্রলীগ নেতা স্বপন, আওয়ামীলীগ নেতা লুৎফর সহ আরো কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। এবিষয়ে আরো তদন্ত করা হচ্ছে।