ধুনটে যমুনা নদীতে বালু উত্তোলন করায় নৌ ড্রেজারসহ ৩ জন গ্রেপ্তার

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলার যমুনা নদীতে নৌ ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির দায়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে নৌ পুলিশ। শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর নৌ থানা পুলিশ এই অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় বালু বোঝাই দুটি নৌ ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গুয়াডহুরি গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে আল আমিন (৫১), ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শহড়াবাড়ী গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে আসিফ (২০) ও একই গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম (২০)।

সিরাজগঞ্জ সদর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেন জানান, ধুনট থানার গোসাইবাড়ী এলাকার মৃত শুকুর মাহমুদের ছেলে রফিক শাহর মালিকাধীন দুটি নৌকা চালিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছিল। শনিবার দুপুরে সংবাদ পেয়ে ধুনট থানার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের কৈয়াগাড়ী ও বানিয়াজান এলাকায় বালু উত্তোলনের সময় দুটি নৌকা চালিত ড্রেজার মেশিনসহ ৩জন আটক করা হয়। এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চললে বলেও জানান তিনি।

তবে জানাগেছে, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৬ মাসের জন্য বালু মহাল হিসাবে ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চৌবের মৌজার ৩৬ একর জমি ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু ইজারাদার বেলাল হোসেন নির্ধারিত মৌজা থেকে বালু না কেটে তিনি নৌকা চালিত ২০-২৫টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে যমুনা নদীর গভীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রির পাশাপাশি শহড়াবাড়ী ঘাট এলাকায় স্তুপ করে রাখছেন।

তবে নদীতে ড্রেজার মেশিনে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ পরিবতন হয়ে মাত্র ৬ মাসেই বৈশাখী চর বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত যমুনা নদীর ডান তীর প্রকল্পের বিভিন্ন স্থানের সিসিব্লক ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েক মাস আগে বালু উত্তোলনের কারনে জমিজমা ও ঘরবাড়ি হারা শতাধিক নারী পুরুষ ভূমিদস্যু বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে। এসংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক বার জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার সংবাদ প্রকাশিত হলেও টনক নড়েনি স্থানীয় প্রশাসনের। তবে চলতি মাসের ১৩ এপ্রিল কথিত বালু মহাল ইজারার মেয়াদ কাল শেষ হলেও যমুনার আধিপত্য ছাড়েনি ভূমিদস্যু বেলাল হোসেন।

ধুনট উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে থাকায় যমুনা নদীর পুরোটাই নিয়ন্ত্রনে নিয়েছেন তিনি। তার সহযোগি হিসাবে রয়েছেন ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ হাসান, রফিক শাহ ও রবি শাহ সহ আরো ১০ জন। তাদের মালিকাধীন ২০-২৫টি ড্রেজার মেশিনে প্রতিদিন যমুনার তীরবর্তী এলাকা থেকে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে।

তবে যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন বরাবরের মতো এবারও দাবি করেন, তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই বালুর ব্যবসা করে আসছেন।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। তাই এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।