নওগাঁয় ডিস ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন : আটক ২

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :

নওগাঁ সদর থানাধীন বিল ভবানীপুর গ্রামে উজ্বল (২৫) নামে এক ডিস ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার দুই দিনের মধ্যেই রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এছাড়া এই হত্যাকান্ডে জড়িত ২ যুবককেও আটক করা হয়েছে। আটককৃত আসামীরা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালত স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মো: আবদুল মান্নান মিয়া (বিপিএম) সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

আটককৃতরা হলো- নওগাঁ সদর থানাধীন বিল ভবানীপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সুজন (২৯) এবং সিরাজুল ইসলামের ছেলে শরিফ (২৫)।

জানাগেছে, গত ২৫ জুলাই সকাল ৯টার দিকে নওগাঁ সদর থানাধীন বিল ভবানীপুর গ্রামের সরদার পাড়া এলাকার একটি পাট ক্ষেতে উজ্বল (২৫) নামে এক ডিস ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মো: আবদুল মান্নান মিয়ার (বিপিএম) দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জনাব একেএম মামুন খান চিশতী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) জনাব মো: গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সাবিনা ইয়াসমিন, সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জুয়েল’সহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও ডিবি পুলিশের কয়েকটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশ উদ্ধার করেন।

এরপর থেকেই এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারে জন্য জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা তদন্ত সহ অভিযান পরিচালনা করেন। একপর্যায়ে এ হত্যা কান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত একই গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সুজন (২৯) এবং সিরাজুল ইসলামের ছেলে শরিফ (২৫) কে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জানায়, নিহত উজ্বল ডিস ব্যবসার পাশাপাশি সুদের ব্যবসা করতো। এছাড়া সে মাদকাসক্ত ছিল এবং গোপনে মাদক ব্যবসাও করত। সেই সুবাদে উজ্বলের সঙ্গে সুজন ও শরিফের সখ্যতা গড়ে ওঠে। এই সখ্যতার কারনে সুজন ও শরিফের কাছ থেকে সুদ বাবদ ও মাদক বিক্রি বাবদ ৩০ হাজার টাকা পাওনা ছিল উজ্বল। তাছাড়া ডিস ব্যবসা নিয়েও তাদের সাথে উজ্বলের দ্বন্দ্ব ছিল। ঈদের পরের দিন দুপুরে সুজন ও শরিফ সহ সঙ্গীরা স্থানীয় বাজারের একটি দোকানে একত্রিত হয়ে উজ্বলকে খুনের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা উজ্জলকে নেশা জাতীয় এম্পুল ইনজেকশন নেওয়ার কথা বলে গত শনিবার রাত সাড়ে আটটায় বিল ভবানীপুর গ্রামের একটি নির্জন মাঠে নিয়ে যায়।

সেখানে ডিপটিউবওয়েলের ড্রেনের উপরে তারা এম্পুল ইনজেকশন নেওয়ার জন্য বসে থাকে। পরবর্তীতে সেখানে শরীফ এবং সুজন যায়। তারা সবাই নেশাগ্রস্থ ছিল। এম্পুল ইনজেকশন গ্রহণের একপর্যায়ে সুজন কৌশলে প্রসাব করার নাম করে উঠে যায় এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পিছন থেকে এসে ধারালো চাকু দিয়ে উজ্বলের গলায় সজোরে টান মারে। এতে উজ্জল লাফালাফি শুরু করলে খুনিরা তার হাত পা চেপে ধরে তার গলা কেটে ফেলে। এরপর উজ্বলের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য শরীফ তার কাছে থাকা আরেকটি চাকু দিয়ে উজ্বলের দু’পায়ের রগ কেটে দেয়। এরপর তারা উজ্বলের লাশ গুম করার জন্য পাশের একটি পাট ক্ষেতের মধ্যে লাশ ফেলে রেখে চলে যাওয়ার সময় পানির মধ্যে চাকু দুটি ফেলে দেয়।

পরবর্তীতে রাতেই নওগাঁ পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো: গাজিউর রহমান, সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জুয়েল এবং মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মাসুদ রানা’সহ পুলিশের একটি টিম খুনিদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় এবং খুনিদের দেখানো মতে স্থানীয় জনগণ চাকু দু’টি উদ্ধার করলে পুলিশ তা জব্দ করে।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো: গাজিউর রহমান জানান, এ হত্যাকান্ডে তিন জন খুনি সরাসরি অংশগ্রহণ করে। তবে আরেকজন পলাতক রয়েছে। এই হত্যাকান্ডে জড়িত দুই জনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।