ধুনটে যমুনার পর এবার ইছামতি নদী ভূমিদস্যুদের দখলে
বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এভাবেই প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে ভূমিদস্যুরা। -অনুসন্ধানবার্তা

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলার যমুনা নদীর পর এবার ইছামতি নদীও দখলে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় একদিকে যেমন ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারি নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, তেমনি সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের গুচ্ছগ্রাম, বসতভিটা ও ফসলী জমিও ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।

জানাগেছে, নদীর নাব্যতা ফেরাতে সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়নে ধুনট উপজেলায় নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। গত ৩ মাস আগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে ধুনট পৌরসভার সরকারপাড়া এলাকার ইছামতি নদী খনন করে তীর বেধে দিয়ে চলে যায়।

এই সুযোগে পাশ^বর্তী কাজিপুর উপজেলার সোনামুখি ইউনিয়নের পাঁচগাছি গ্রামের সাবেক মেম্বার ফরিদুল ইসলাম বাবু ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীর মাঝে বাধ নির্মাণ করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর তলদেশ থেকে বালু করে বিক্রি করে আসছে।

গত এক সপ্তাহ ধরে একই জায়গায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজগুলো ধসে যাচ্ছে। এছাড়া নদীর মাঝে বাধ নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি নদীর পূর্বপাশের পাঁচগাছি গ্রামের গুচ্ছগ্রাম (সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প) ও নদীর পশ্চিম পাশের বসতভিটা ও ফসলী জমি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।

ধুনট সরকারপাড়া এলাকার চায়না বেগম নামে এক বৃদ্ধ নারী আক্ষেপ করে বলেন, এভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হলে শেষ সম্বল ভিটেমাটিটুকুও নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।

এবিষয়ে ড্রেজার মালিক সোনামুখি গ্রামের আমিনুল ইসলাম মোবাইলফোনে প্রথমে নদী খনন প্রকল্পের কাজের কথা বললেও পরে তিনি কাগজ দেখাতে না পেরে স্বীকার করেন তিনি অবৈধভাবে বালু তুলছেন। তিনি বলেন, পাঁচগাছি গ্রামের বাবু মেম্বারের নির্দেশেই স্থানীয় অনেককে ম্যানেজ করে সেখান থেকে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে ধুনট পৌর এলাকার ইছামতি নদী থেকে কিভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন, এবিষয়ে জানতে কাজিপুর উপজেলার সোনামুখি ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড পাঁচগাাছি গ্রামের সাবেক মেম্বার ফরিদুল ইসলাম বাবু মোবাইলফোনে বলেন, ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন অবৈধ হোক, আর যাই হোক, আগামীকাল বসে সব কিছু ঠিক করা হবে। এই বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।

তবে শুধু ধুনট পৌর এলাকায় সরকারপাড়া ইছামতি নদীতেই নয়, একইভাবে চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের দিঘলকান্দি ও চৌকিবাড়ী গ্রামের নদীর তিনটি পয়েন্ট থেকেই ড্রেজার মেশিনে এভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে এরআগে ধুনট উপজেলার যমুনা নদী দখলে নেন ভূমিদস্যুরা। বেলাল নামে এক ব্যক্তি ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চৈবের মৌজা বালু মহাল ইজারা দিলেও পুরো যমুনা নদী দখলে নেন তিনি। কিন্তু যেখান থেকে বালু উত্তোলনের কথা, সেখানে চর জেগে ওঠায় নদীর তীরবর্তী বাধ সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ড্রেজার মেশিনে একই কায়দায় বালু উত্তোলন করে আসছে বেলাল হোসেন।

এসব বিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, নদী খনন প্রকল্পের কথা শুনেছিলাম। তবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।