পলাশবাড়ীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে দই : হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

শাহারুল ইসলাম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি :

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দইওয়ালা’ গল্পের দই নেবেন গো দই, ভালো দই! এমন হাঁক ডাক ছেড়ে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মেঠোপথ ধরে গ্রাম-গঞ্জে বা হাট-বাজারে ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল মিষ্টি দই। যা এখন মুদি দোকান, পানের দোকান এবং কনফেকশনারী দোকানগুলোতে দেদারচ্ছে বিক্রি হচ্ছে।

পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের ঠুটিয়াপাকুর বাজারের সাদুল্লাপুর রোডে একটি, পৌরসভার ড্রীমল্যান্ডের সামন দিয়ে দূর্গাপুর নতুন বাজারে দিলিপের দিয়ামনি দই ঘর একটি, মহদীপুর ইউনিয়নের মহদীপুর হিন্দুপাড়ায় মানিকের দইয়ের কারখানা একটি, কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের নয়আনা নওদা গ্রামের পাপুলের রোদোশীল দই ঘর একটি। এ নিয়ে মোট ৪টি অনুমোদনবিহীন ভেজাল দই তৈরীর কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে।

সাইনবোর্ড কিংবা দই কোম্পানির চিহ্ন বিহীন সরকারী অনুমোদন ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে এইসব ভেজাল দই। যা কোমলমতি শিশুদের মুখরোচক খাদ্য। উপজেলা জুড়ে বেশকিছু দই কারখানায় লেবেল ও ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই বিভিন্ন নামে-বেনামে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে। পাইকারি ১১ টাকা, খুচরা ২০ টাকা এবং ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের হাড়ি দই এর পাইকারি দর ৬০ ও খুচরা ৮০ টাকা দরে কারাখানা থেকে এসব ভেজাল দই বিক্রি করা হচ্ছে।

এসব ভেজাল দই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ও হাট-বাজার ছাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে পাশ^বর্তী থানা সাদুল্লাপুর, পীরগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, সাঘাটা, ফুলছড়িসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায়। আর ক্রেতা হিসেবে সাধারণ মানুষ ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা না জেনে এসব ভেজাল দই খেয়ে পেটের পীড়াসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা খালি গায়ে, হাতে নেই হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও হেডক্যাপ। ধুলি বালিময় খোলা মেঝেতে সারি সারি মাটির হাড়িঁ, কড়াই ও প্লাস্টিকের বাজারজাত প্যাকেট বসানো। আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি না থাকলেও অপরিস্কার ও স্যাঁতস্যাতে দুর্গন্ধময় স্থানেই ঢালা হচ্ছে দই তৈরির চিনি, পাউডার, বিষাক্ত ক্যামিকেল ও বিভিন্ন উপকরণ।

এ সময় আরও দেখা যায়, ময়লা-গন্ধযুক্ত ড্রাম আর বড় বড় কড়াইয়ে মজুদ করা দুধ ও দইয়ে মাছির ভনভনানি, সেই সাথে সেখানে অসংখ্য পোকার মাকড়ের উপদ্রুব।

ভেজাল কারখানা সম্পর্কে সচেতন এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে গড়ে তোলা হয়েছে অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠান। দই কারাখানার আড়ালে খাদ্যের নামে এসব অখাদ্যের ব্যবসা উপজেলায় অনেক গজিয়েছে। তাই এসব ভেজাল খাদ্য ও দই তৈরির কারখানা বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, অনেক ব্যবসায়িরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটা ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই এসব ব্যবসা গড়ে তুলেছে। তারা ট্রেড লাইসেন্সকেই ব্যবসার লাইসেন্স মনে করেন। আসলে ট্রেড লাইসেন্স মানে যে অবৈধ বা ভেজাল ব্যবসার পসরা খোলার অনুমোদন নয়। সেটা তারা মানতে নারাজ। মনে হয় অনেক চেয়ারম্যান মেম্বারও জানেন না বিষয়টি। তা না হলে যাচাই বাছাই ছাড়া কিভাবে একটা ভেজাল কারখানার ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয় তা জনপ্রতিনিধিদের প্রতি সচেতন মহলের প্রশ্ন।

এব্যাপারে পলাশবাড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী এসব খাবার নিরাপদ নয় এবং মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। তাই এসব কারাখানার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।