প্রাপ্তির মাঝে অপ্রাপ্তি!

স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অতীত বর্তমান মিলে সূর্যের মতো প্রদীপ্ত দুই নক্ষত্রের জন্ম হয়েছিল এই স্বাধীন বাংলার ২টি গঞ্জের ২টি পাড়ায়।

একটি হলো গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া! আরেকটি হলো সিরাজগঞ্জের কুড়িপাড়া। গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সিরাজগঞ্জের কুড়িপাড়ায় জন্মেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ জীবন-মৃত্যুর সারথি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী।

রাজনৈতিক জীবনে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ কাজিপুর আসন হতে ক্যাপ্টেন এম মুনসুর আলী প্রথম প্রাদেশিক পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রায় ৬টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক, কৃষি, খাদ্য, শিল্প, বাণিজ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করেন।

স্বাধীনতাত্তোর বাংলার মন্ত্রিসভায় এম মনসুর আলী স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে সড়ক সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।

তখন থেকে কাজিপুরবাসীর প্রতীক নৌকা প্রতীক। তাই তারা নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বার বার নির্বাচিত করেছেন। শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পরে তাঁর সুযোগ্য সন্তান মোহাম্মাদ নাসিম এই আসনের দায়িত্ব নেন। তিনি ১৯৮৬ সালে (সিরাজগঞ্জ-১) কাজিপুর আসন হতে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে (সিরাজগঞ্জ-১) ও (সিরাজগঞ্জ-২) আসন হতে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়ে একসাথে ৩টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

এলাকাবাসীর ভালোবাসা বুকে ধারণ করে অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড উপহার দিয়েছেন। জন্মদাতা পিতার মতো তিনিও কাজিপুরের বেকার সমস্যা সমাধানের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। গ্রামে গ্রামে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে বেকারত্ব দূর করন তার একটি উতকৃষ্ট উদাহরণ। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন দেখে পাশের উপজেলার মানুষগুলো আপসোস করত সর্বদা।

কাজিপুর, সিরাজগঞ্জের মানুষ হলেই আর কথা নেই, মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতো তাদের মিষ্টি-মধুর কথা। আঞ্চলিক ভাষায় শুধু শুনতাম “আংগেরে নাসিম ভাই তার কাছে যা চাই; চাওয়া মাত্র তাই পাই।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধুনট শেরপুরবাসী বলতেন নাসিম সাহেবের মতো নেতা যদি আমরা পেতাম আমাদের রাস্তাঘাট, ব্রিজ সবই হত বাদ পড়ত না কিছুই!

২০১৪ সালে নাসিম সাহেব আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পেয়ে সিরাজগঞ্জে শহীদ ক্যাপ্টেন এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করলেন। শুধু তাই নয় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও কাজিপুরবাসীকে যমুনার ভাঙ্গন থেকে স্থায়ী ভাবে রক্ষা করেছেন।

সিরাজগঞ্জ হতে বের হলেই প্রথমে চোখে পড়ে সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর-বগুড়া ফোরলেন রাস্তা, সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক কলেজ, ফলিত পুষ্টি গবেষণা ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা নার্সিং ইন্সস্টিটিউট, সিমান্ত বাজার ইনস্টিটিউট অব্ হেলথ টেকনোলজি, আমেনা মুনসুর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট এরকম উল্লেখ না করা আরও কত, পিপুল বাড়ীয়া শহীদ ক্যাপ্টেন এম মুনসুর আলী চত্বর হতে মহিষামুড়া শহীদ ক্যাপ্টেন এম মুনসুর আলী চত্বর হয়ে মহাসড়কটি চলে গিয়েছে বগুড়ার দিকে।

অথচ মহাসড়কের সাথে মাত্র ১০ ফুট পশ্চিমে ইছামতী নদীর উপর একডালা নামক স্থানে জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি আজও নির্মাণ হয়নি। কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, কতটুকু ব্যস্ততম হলে একইস্থানে ২টি বাঁশের সেতু নির্মাণ করা হয় তা সকলেই অনুমেয়। বর্ষাকালে ২টি নৌকা দিন রাত যাত্রী পারা পারে ব্যস্ত থাকেন দুই নৌকার দুই মাঝি।

২০২০ সালে মোহাম্মদ নাসিম মারা গেলে বাবার আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। নদীর উভয় পাশেই মানুষের বসবাস, সিএনজি, অটো রিকশা হতে নেমে কষ্ট করে যখন বাঁশের সাঁকো দিয়ে লাগেজ ও পোটলা নিয়ে নদী পার হয় এ দৃশ্য দেখে সত্যিই কষ্ট লাগে।

নদী পার হওয়ার সময় ঘর্মাক্ত শরীর বেয়ে আসে একটা ক্লান্তির ছাপ। বিরুক্তি স্বরে বিষোদগার করতে থাকে ভুক্তভোগী পথচারীরা। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ব্রিজ আজকের সময়ে কোথাও বাদ আছে তা জানা নেই।

শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র শহীদ ক্যাপ্টেন এম মুনসুর আলী, নাসিম সাহেব ও তানভীর শাকিল জয় সাহেবের বাড়ির পাশের জায়গা ছাড়া। একদিন গোপাল নগর, মথুরাপুর, চৌকিবাড়ী, সুঘাট, মির্জাপুর ও সীমাবাড়ী ইউনিয়নবাসী কাজীপুরবাসীর কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনতো, কিন্তু এখন দিন বদলেইছে না। একদিন যারা ছিলেন শ্রোতা, তারাই এখন বক্তা হয়ে তাচ্ছিল্যের ভাষায় বলে ধুনট-শেরপুরের এলাকায় হলে এ ব্রিজ কত দিন আগেই হত আরও কত কথা.! অসহায় কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জবাসী কথাগুলো নিরবে হজম করছে।

তাই শহীদ ক্যাপ্টেন এম মুনসুর আলীর দৌহিত্র ও মোহাম্মদ নাসিম সাহেবের ছেলে সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় আপনার সু-দৃষ্টি কামনা করছি। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি অতিসত্বর নির্মাণ করে হাজার বছরের ভোগান্তির অবসান করবেন বলে আশা করি।

লেখক:
গোলাম মোস্তফা
সিনিয়র শিক্ষক
মথুরাপুর মুলতানী পরভীন শাহজাহান তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়।
ধুনট,বগুড়া।