বগুড়া ডিবি পুলিশের হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়া ডিবি পুলিশের হেফাজতে আইনজীবী সহকারী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবের (৩৫) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে নিহতের স্বজনদের ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকাল ৫টার দিকে আদালতের বাইরে থেকে হাবিবুর রহমানকে তুলে নিয়ে ডিবি অফিসে নেয়া হয়, পরে রাত পৌনে ৯টায় সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

নিহত হাবিবুর রহমান হাবিব বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে এবং তিনি বগুড়া জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

নিহত হাবিবের মামা বগুড়া বার সমিতির সিনিয়র সদস্য মঞ্জুরুল হক বলেন, হাবিব তার সহকারি হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করতেন। মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় সে তার সহকর্মী রাকিবুলকে নিয়ে আদালত থেকে বের হয়ে যায়। পরে আদালতের ফটক দিয়ে বের হওয়ার পর পরই একদল লোক তাদের গতিরোধ করে এবং হাবিবের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়।

অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল হক বলেন, হাবিবের সহকর্মী রাকিবুলের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর পরই আমি বিষয়টি নিয়ে অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলি। আমার সহকর্মীরা খোঁজ করে জানতে পারেন হাবিবকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। সন্ধ্যা ৬টায় আমি ডিবি অফিসে যাওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের অফিস কম্পাউন্ডের ভেতরে যাই। কিন্তু কর্তব্যরত সদস্যরা আমাকে ডিবি অফিসে প্রবেশে বাধা দেয়। পরে আমি ডিবির পরিদর্শকের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করি। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। রাত ৯টায় শুনতে পাই যে, হাবিবুর রহমান হাবিব মারা গেছেন এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তার লাশ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, হাবিবুর রহমান শারীকিভাবে সুস্থ ছিলেন। তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এবিষয়ে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আতিকুজ্জামান জানান, সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ সন্ধ্যা ৭টায় হাবিবুর রহমানকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তখন তিনি অচেতন ছিলেন। পরে তাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয়।

ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছিলেন যে, হাবিবুর রহমান অচেতন হওয়ার আগে বুকে ব্যাথার কথা বলেছিলেন। সে জন্য আমরা তার বুকে চাপ দিচ্ছিলাম। এ সময় তার শরীরে বমির আলামত পাই। তিনি বলেন, প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা চেষ্টা করেও হাবিবুর রহমানের জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

তবে হাবিবকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বগুড়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোস্তাফিজ হাসান বলেন, ১০ বছর আগে বগুড়ার শাজাহানপুরের জোড়া গ্রামে বিপুল নামে ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছিল। হাবিবুর রহমান ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন। নিহত কিশোরের সৎ মা খুকি বেগম ওই হত্যা মামলায় অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছিল। কিন্তু সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতের ধার্য তারিখের আগেই গত ২ আগস্ট খুকি বেগমকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর একটি পা বিহীন তার দেহ পাওয়া যায়। তার এক মাস পর গত মঙ্গলবার মনোয়ারা বেগম নামে প্রতিবেশী এক নারীর বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে খুকি বেগমের খণ্ডিত পা উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মনোয়ারা বেগমকে আটক করা হলে তিনি খুকিকে হত্যায় হাবিবের জড়িত থাকার তথ্য দেন এবং জানান তার সামনেই হাবিবসহ কয়েকজন খুকিকে হত্যা করে। মনোয়ারা বেগমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হাবিবকে মঙ্গলবার বিকালে আটক করা হয়। পরে ডিবি অফিসে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মনোয়ারা বেগমের মুখোমুখি করা হলে হাবিবুর রহমান বুকে ব্যথার কথা বলেন। পরে তাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে হাবিবের লাশ একটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে রাখা হয়েছে। আইনজীবী সমিতির সদস্যরা লাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে হাবিবকে হত্যার জন্য ডিবি সদস্যদের দায়ী করছেন।

তবে এবিষয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, হাবিবুর রহমান ৪৫ মিনিটের মতো ডিবি অফিসে ছিলেন। জিজ্ঞাসাদের এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তিনি বলেন, যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে।