বগুড়ায় ক্লিনিকের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই অসুস্থ পার্টনারকে হত্যা করে সাদ্দাম

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিম হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীকে চেতনানাশক পুশ করে হত্যার ঘটনায় হাতেনাতে আটককৃত সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিহতের বড় ভাই আব্দুস সামাদ বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এরআগে বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিম হোসেনকে চেতনা নাশক পুশ করার সময় সাদ্দামকে হাতেনাতে আটক করে হাসপাতালের এক নার্স ও স্বজনেরা। চেতনানাশক পুশ করার ১০ মিনিটের মধ্যেই মারা যান ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন। পরে আটক সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশে সোপর্দ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিহত সেলিম হোসেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আটবাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। আর গ্রেফতারকৃত সাদ্দাম হোসেন একই উপজেলার রামেশ্বরপুর গ্রামের জিন্নাহ মিয়ার ছেলে।

এছাড়া তারা দুজনেই বগুড়া সদরের পীরগাছা বাজারে অবস্থিত সালমা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিকের ব্যবসায়িক অংশীদার। নিহত সেলিম ছিলেন এই ক্লিনিকের ম্যানেজার। আর সাদ্দাম ছিলেন এই ক্লিনিকের নার্স।

গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়, ক্লিনিকের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে কৌশলে হত্যাকান্ডের পথ বেছে নেয় সাদ্দাম হোসেন।

নিহত সেলিমের বড় ভাই আব্দুস সামাদ জানান, পীরগাছা বাজারে ৯ মাস আগে ৭ জন অংশীদারের মাধ্যমে সালমা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৭ জনের মধ্যে তাদের পরিবারের ৪ জনের অর্থেক এবং সাদ্দামের একারই অর্ধেক শেয়ার ছিল। সাদ্দাম নিজেই ক্লিনিকে নার্সের (সেবক) দায়িত্বে এবং সেলিম ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতেন।

তিনি আরো জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেলিম ক্লিনিকে থাকা অবস্থায় অসুস্থ বোধ করেন। এসময় সাদ্দাম তার রক্তচাপ মেপে জানায় উচ্চ রক্ত চাপ (হাই প্রেসার) হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া দরকার। অসুস্থতার খবর শুনে তার ভাইকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।

এক ঘন্টা পর সাদ্দাম হাসপাতালে সেলিম হোসেনকে দেখতে যান। এসময় সেলিম হোসেনের দেহে স্যালাইন চলছিল। এই সুযোগ বুঝে সাদ্দাম তার পকেট থেকে ইনজেকশন বের করে সেলিমের হাতে লাগানো ক্যানুলা দিয়ে পুশ করে দেন। এসময় বড় ভাই সামাদ জানতে চাইলে সাদ্দাম জানায় গ্যাসের ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। কিন্তু ইনজেকশন পুশ করার ১০ মিনিটের মধ্যেই সেলিম হোসেন মারা গেলে সাদ্দাম হোসেনকে আটক করা হয় এবং তার পকেট থেকে ব্যবহৃত চেতনা নাশক ইনজেকশনের এ্যাম্পুল উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

নিহতের ভাই আব্দুস সামাদ জানান, গত ৭ জুলাই তার আরেক ছোট ভাই শাহীন আলম অসুস্থ বোধ করলে পীরগাছা বাজারে তাদের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্যালাইনের মাধ্যমে ইনজেকশন পুশ করার পর রাতে শাহীন মারা যান। পরে বলা হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তখন শাহীনের মৃত্যুর ঘটনায় সাদ্দামকে কেউ সন্দেহ করেনি। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাদ্দাম কৌশলে আবারও তার আরেক ভাইকে হত্যা করে।

তবে গ্রেফতারের পর সাদ্দাম হোসেন জানায়, ক্লিনিকের পিছনে তার অবদান এবং পরিশ্রম সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেলিম ও তার অন্য ভাই কোন কাজ না করে বসে থেকে টাকার ভাগ নেয়। এছাড়া ম্যানেজার হিসেবেও ক্লিনিকের হিসাব নিকাশ করতেন সেলিম। ফলে হিসাবে গড় মিল করতে পারতো না সাদ্দাম। এই ক্ষোভ থেকে কৌশলে সেলিমকে হত্যার পথ বেছে নেন তিনি। তবে দুই মাস আগে আরেক ভাই শাহিন আলমকে হত্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে সাদ্দাম নিশ্চুপ থাকে।

এব্যাপারে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এঘটনায় গ্রেফতারকৃত সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।