বগুড়ায় এক মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা : সেই প্রতারক আটক
বগুড়ায় এক মেয়েকে মোবাইলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগে মনির হোসেন (২৯) নামে এক প্রতারককে আটক করেছে জেলা পুলিশের সাইবার ইউনিট। -অনুসন্ধানবার্তা

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ায় তালাকপ্রাপ্ত এক মেয়েকে মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রতারণা মাধ্যমে অর্থ আদায় করার অভিযোগে মনির হোসেন (২৯) নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা শাখার “সাইবার টিম”। এসময় তার কাছ থেকে ১টি অপ্পো কোম্পানীর স্মার্ট মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন কোম্পানীর ৪টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত সাইবার প্রতারক মনির হোসেন নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানাধীন মহিষভাঙ্গা গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে।

জানাগেছে, গ্রেফতারকৃত মনির হোসেন বগুড়া জেলার শেরপুর থানা এলাকার এক দিনমজুরের ২৬ বছর বয়সী তালাকপ্রাপ্ত এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ওই মেয়েটি এক সন্তানের জননী। সংসারের অভাবের তাড়নায় ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন হেমায়েতপুর এলাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকুরী নেয় মেয়েটি। গত কয়েক মাস পূর্বে একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে মেয়েটিকে ফোন করে প্রতারক মনির হোসেন। সে পরিচয় দেয় তার একজন শুভাকাঙ্খী বলে।

পরবর্তীতে মেয়েটিকে বিভিন্ন সময়ে কল দিতে থাকে অচেনা অজানা ব্যক্তি মনির হোসেন। মিষ্টি কথাবার্তার এক পর্যায়ে মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে মনির। একপপর্যায়ে তার স্বার্থ হাসিলের জন্য মেয়েটির কিছু নগ্ন ছবি ও ভিডিও দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তার এই ধরনের প্রস্তাবে রাগান্বিত হয়ে মেয়েটি তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

তারপরও অচেনা অজানা মনির হোসেন তার স্বার্থ হাসিলের জন্য মেয়েটির সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে। প্রতারক মনির মেয়েটিকে জানায়, সে অবিবাহিত এবং তাকেই বিয়ে করবে। তখন মেয়েটি তার সন্তানের ভবিষৎ এর কথাচিন্তা করে রাজি হয়ে যায় অচেনা অজানা প্রতারকের কথায় এবং তার কথামত নিজের নগ্ন ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে নিজের ব্যবহৃত স্মার্ট ফোনের হোয়াটস্ এ্যাপের মাাধ্যমে প্রতারকের মোবাইলে পাঠিয়ে দেয়।

এদিকে মেয়েটি তার নগ্ন ভিডিও পাঠিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই সেই ভিডিওটি ডাউনলোড করে মনির। এরপর মেয়েটির মোবাইলে আবার সেই ভিডিও পাঠিয়ে দিয়ে টাকা দাবি করা শুরু করে প্রতারক মনির। টাকা না পেলেই নগ্ন ভিডিওটি সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মেয়েটির কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ৮ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয় মনির।

একপর্যায়ে মেয়েটি আর কোন উপায়ন্তর না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যা করার, কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সেটাও সম্ভব হয়ে উঠে না তার।

তাই কিছু দিন আগে মেয়েটি তার এক নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী (বিপিএম সেবা) কে ঘটনাটি জানায়।

এরপর পুলিশ সুপারের নির্দেশনায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জনাব আলী হায়দার চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ওই প্রতারককে ধরতে কাজ শুরু করে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা শাখার “সাইবার টিম”। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই অচেনা অজানা প্রতারক মনিরকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয় সাইবার টিম।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বগুড়া ডিবির ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ’র নেতৃত্বে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন হেমায়েতপুর, বড়ারী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হয় সাইবার প্রতারক মনির হোসেনকে।

বগুড়া ডিবির ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আসামী মনির জানায় সে ইতিপূর্বেও প্রতারনার মাধ্যমে একাধিক বিয়ে করেছে।

প্রতারণার শিকার মেয়েটি যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে সেই একই প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরীর সুবাদে মেয়েটিকে দেখতে পায় প্রতারক মনির। তবে মনির মেয়েটিকে দেখলেও, মেয়েটি কখনো মনিরকে দেখেনি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করেছে প্রতারক মনির।

তিনি আরো জানান, প্রতারক মনির হোসেনের মোবাইল ফোন বিশ্লেষন করে জানা যায়, এর আগেও সে একাধিক মেয়েদের সাথে এই ধরনের সাইবার অপরাধ করেছে।

আটককৃত আসামী মনির হোসেন নিজের পরিচয় গোপন করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন মেয়ের নগ্ন ভিডিও সংগ্রহ করতো এবং সামাজিক মর্যাদা হানি করা সহ ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় করার লক্ষ্যে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতো।

এঘটনায় আটককৃত মনির হোসেনের বিরুদ্ধে বগুড়ার শেরপুর থানায় পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।