বগুড়ায় চাকুরী দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণা : ৪ প্রতারক গ্রেফতার

বগুড়া প্রতিনিধি : অনুসন্ধানবার্তা
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে ৪ জন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

বুধবার রাতে বগুড়া সদর ও গাবতলী থানা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র, ব্যাংকের সিল এবং ভুয়া রেজিস্টার খাতা উদ্ধার করে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো: বগুড়ার গাবতলী উপজেলার চক কাতুলী মধ্যপাড়া এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আফজাল (৩০), কলেজপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে নুরুজ্জামান সজল (৪২), ঠাকুরগাঁও জেলার মলানকুড়ি এলাকার রমজান আলীর ছেলে সাদেকুল ইসলাম (৩৮) এবং বগুড়া সদর উপজেলার কদিমপাড়া এলাকার মৃত কছিম উদ্দীনের ছেলে লুৎফর রহমান ওরফে মালেক (৫৮)।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী (বিপিএম-সেবা)।

পুলিশ সুপার জানান, আসামী আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আফজালের চাকুরী চলে যাওয়ার পরে সাদেকুল এর সাথে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেওয়ার নাম করে ভূয়া নিয়োগপত্র তৈরির কাজ শুরু করে এবং তাদের সাথে সহযোগি হিসেবে নুরুজ্জামান সজল ও লুৎফর রহমান যোগ দেয়।

তারা প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। এই প্রতারণার কাজে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া ছিল। নিয়োগপত্র অনুযায়ি তারা কেউ কখনো সরকারি ডাক্তার, সরকারি মেডিকেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ভূমি অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, অতিরিক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ওয়ার্ড ইনচার্জ হিসেবে নিজেদের পরিচয় নিয়োগ প্রত্যাশীদের দিয়ে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় ভুক্তভোগি যশোরের বাঘারপাড়া এলাকার সবুজ হোসনের মামাতো ভাই মাহমুদুর রহমানের সাথে লুৎফর রহমান মালেক ও সাদেকুলের পরিচয় হলে তারা নিজেদের ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ওয়ার্ড ইনচার্জ হিসেবে পরিচয় দেয়।

তারা জানায়, বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাদের পরিচিত। শজিমেক হাসপাতালে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নেওয়া হবে। আপনার পরিচিত কেউ থাকলে বলবেন। তখন মোঃ মাহমুদুর রহমান তার বেকার মামাতো ভাই ভুক্তভোগি সবুজের কথা জানালে, তারা জানায়, প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে মাহমুদুরের মামাতো ভাইয়ের চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। তবে চাকুরীর নিয়োগপত্র পাওয়ার পরে সাত লাখ টাকা দেয়ার কথা তারা জানায়।

তার প্রলোভনে রাজি হলে মালেক ভুক্তভোগি সবুজকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় নিয়ে এসে বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় আব্দুর রাজ্জাক এবং নুরুজ্জামান সজলের কাছে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলে পরিচয় করিয়ে দেয়।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় প্রদানকারী আসামী আব্দুর রাজ্জাক ভুক্তভোগির সমস্ত কাগজপত্র দেখে পরের দিন থেকেই কাজে যোগদান করতে বলে এবং আরো জানায় পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে সাত লাখ টাকা দিলে নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড প্রদান করা হবে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, পরবর্তীতে ভুক্তভোগি সবুজ তাদের কথায় বিশ্বাস করে তার মামাতো ভাই মাহমুদুর রহমানকে বলে তিনি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আব্দুর রাজ্জাককে সাত লাখ টাকা প্রদান করে।

একই দিন ভুক্তভোগি সবুজ বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে যোগদান করতে গেলে আব্দুর রাজ্জাক তখন লুৎফর রহমান মালেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার সাথে থেকে কাজ শেখার কথা বলে। এছাড়া ভুক্তভোগী সবুজের মামাতো ভাই মাহমুদুর নিয়োগ পত্র আইডি কার্ড চাইলে তারা ৮ মার্চ দেওয়ার কথা জানায়। পরে ৮মার্চ তারা শজিমেক হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তার রুমে জানতে পারে আব্দুর রাজ্জাক নামে কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নেই।

এছাড়া শজিমেক হাসপাতালের বক্ষব্যাধির ওয়ার্ড ইনচার্জ জানায়, ভুক্তভোগী সবুজ হোসেন নামে কারো চাকরির বিষয়ে কেউ কিছু জানে না এবং ওই নামে কারো চাকরি হয়নি। পরে ভুক্তভোগীরা জেলা পুলিশকে অবগত করলে ডিবির একটি দল প্রতারকদের গ্রেফতারে অভিযান চালায়। পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রতারকদের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।