ভিক্ষুককে রাস্তা থেকে তুলে এনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দিলেন ধুনটের ইউএনও
বগুড়ার ধুনটের মালোপাড়া গুচ্ছগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোতে আশ্রিত পরিবারের খোঁজ খবর নিতে যান স্থানীয় এমপি হাবিবর রহমান, ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত ও পৌর মেয়র এজিএম বাদশাহসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। -অনুসন্ধানবার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা, ধুনট:
পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি করে মানসিক প্রতিবন্ধী একমাত্র মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করে আসছেন বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার পারধুনট গ্রামের বৃদ্ধ আফজাল হোসেন। প্রায় নব্বই বছর বয়সেও ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন তিনি। ৭১ এর যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করলেও সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলায় মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। জীবন বাজি রেখে জন্মভূমির স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করলেও নিজের বেঁচে থাকার জন্য মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই পাননি। তাইতো অন্যের জমিতে ছোট একটি ছাপড়া ঘর তুলে মানসিক প্রতিবন্ধী ডিভোর্সি একমাত্র মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন বৃদ্ধ আফজাল।

সম্প্রতি ধুনট উপজেলার আড়কাটিয়া বাজারে ভিক্ষাবৃত্তি করার সময় হঠাৎ করেই ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্তের নজরে পড়েন ভিক্ষুক আফজাল হোসেন। তার কাছে গিয়ে ভিক্ষুক বৃদ্ধ আফজালের দু:খ দূর্দশার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেন ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত। সেই সঙ্গে ওই ভিক্ষুক আফজালকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করতে মালামালসহ একটি মুদির দোকানও তৈরী করে দিচ্ছেন ধুনটের এই মানবিক কর্মকর্তা।

তবে শুধু আফজালকেই নয়, তার মতো ভূমিহীন ও গৃহহীন, অস্বচ্ছল, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী সহ অসংখ্য অসহায় পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রদান করেছেন ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত।

বৃদ্ধ অফজালের মতো আরেক অসহায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী ছায়া রানী। তার বাড়ি ছিল ধুনট সদর ইউনিয়নের মালোপাড়া গ্রামে। অস্বচ্ছল পরিবারের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিয়ে হয়নি তার। পৈত্রিক কোন ভিটেমাটিও ছিল না। তাই মায়ের সঙ্গে অন্যের জায়গায় বসবাস করে আসছিলেন ছায়া রানী। একটি ঘরের জন্য ইউএনও’র শরনাপন্ন হয়েছিলেন।

এসময় ছায়া রানী কান্না জড়িত কণ্ঠে ইউএনও’কে বলেন, ‘আমাদেরকে কি দেখার কেউ নেই? তার এমন কথা শোনার পর তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ওই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেন ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত।

তবে শুধু আফজাল ও ছায়া রানীকেই নয়, তাদের মতো শারীরিক প্রতিবন্ধী ও ডিভোর্সি রূপালী খাতুন, ভিক্ষুক শাহজামাল এবং কাজুলী বেগম সহ অসংখ্য অসহায় মানুষকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর প্রদান করেছেন ধুনটের এই নির্বাহী কর্মকর্তা।

জানাগেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে তার কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন দফায় ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ৩৭১টি গৃহ নির্মান করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাদ্দকৃত দুস্থদের জন্য এসব ঘর তৈরী করতে অনেকটাই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে ইউএনও সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

গত বৃহস্পতিবার ধুনট মালোপাড়া গুচ্ছগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বসবাসরত দুস্থদের খোঁজখবর নিতে যান বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান, ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত, ধুনট পৌর মেয়র এজিএম বাদশাহ, ভাইস চেয়ারম্যান মহসীন আলম সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

ধুনট উপজেলা সদরের মালোপাড়া সরকারি গুচ্ছগ্রামে আশ্রিত শারীরিক প্রতিবন্ধী রূপালী খাতুন বলেন, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে যেতে সড়ক দূর্ঘটনায় আমার এক পায়ের অর্ধেক কেটে ফেলতে হয়। তখন আমি গর্ভবতী ছিলাম। কিন্তু পা কেটে ফেলায় আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স দেয়। তখন আমি নিরুপায় হয়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে ছোট্ট একটি ছাপড়া ঘরে থাকতাম। কিছু দিন আগে জানতে পারি প্রধানমন্ত্রী অসহায়দের ঘর দিচ্ছেন, এই সংবাদ শুনে ধুনটের ইউএনও সাহেবকে বললে তিনি আমাকে এই ঘরের ব্যবস্থা করে দেন। এখন আমি আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি।

ধুনট সরকারি ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক হাদিউজ্জামান বলেন, কলেজটির পিছনেই ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১২০টি ঘর। ঘরগুলো দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি আশ্রিতরাও নিরাপদে বসবাস করে আসছে।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, ঘরগুলো নির্র্মান করতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। জমি নির্বাচন থেকে শুরু করে ঘর নির্র্মান পর্যন্ত অনেক প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার গড়ার লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরগুলো তৈরী করে অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলেতে পেরেছি। একাজে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান সহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরাও অনেক সহযোগিতা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্রতিটি ঘরেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে। এছাড়াও এসব ভূমিহীনদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বগুড়ার ধুনটের মালোপাড়া গুচ্ছগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোতে আশ্রিত পরিবারের খোঁজ খবর নিতে যান স্থানীয় এমপি হাবিবর রহমান, ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত ও পৌর মেয়র এজিএম বাদশাহসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। -অনুসন্ধানবার্তা

বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান বলেন, জাতিক পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে আজ তিনি না থাকলেও তার এই স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ধুনট উপজেলায় ৩৭১টি ভূূমিহীন অসহায় পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উহারের ঘর নির্মান করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব ভূমিহীন অসহায় মানুষদের সরকারি ভাতা সহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।

দেখুন ভিডিও প্রতিবেদন-