মিছিলে ফুঁসে উঠেছে বগুড়ার গাবতলীর কালাইহাটা গ্রামের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক অনুসন্ধানবার্তা: বগুড়া
ইউপি নির্বাচনে চার জন নিহত হওয়ায় বিদ্রোহ, উত্তেজনা ও মিছিলে ফুঁসে উঠেছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কালাইহাটা গ্রামের মানুষ। হামলা-মামলা ও গ্রেফতার আতংকে এখন দিনাতিপাত করছে ওই গ্রামবাসীরা। গত বুধবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাইহাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট গণনার আগে গ্রামবাসী ও বিজিবির সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন মারা যাওয়ার পর থেকেই এমনি অবস্থা দেখা গেছে সেখানে।

এদিকে ভোট কেন্দ্র হামলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল মজিদ বাদী হয়ে ৩ শতাধিক অজ্ঞাতনামা নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে গাবতলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালাইহাটা গ্রামের আঙ্গিনায় মহিলাদের জটলা, কালারহাটা বাহারে পুরুষদের প্রতিবাদী আলোচনা এবং মামলার আতংক। পুরো গ্রামের আঙ্গিনা, বাজার, রাস্তার মোড়ে একই গল্প, ওইদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো।
মিছিলে ফুঁসে উঠেছে বগুড়ার গাবতলীর কালাইহাটা গ্রামের মানুষ

বালিয়াদিঘী গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জানালার কাচ ভাঙ্গা, এখানে ওখানে ইট ছড়িয়ে আছে। কোন শিক্ষার্থী ভয়ে বিদ্যালয়ে আসেনি। গুলিবিদ্ধ হয়ে যেখানে নিহতরা পড়ে ছিল, সেখানে ছোপ ছোপ কালো রক্ত জমাট বেধে আছে। জায়গাগুলো ইট দিয়ে ঘেরাও করে লাল পতাকা উড়ানো হয়েছে। থেমে থেমে মিছিল চলছিল, তবে গনমাধ্যম কর্মীদের দেখলেই এগিয়ে এসে শ্লোগান দিতে থাকে ‘আমার ভাই-বোন মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’। হুকুম দাতা ম্যাজিষ্টেটের বিচার চাই, করতে হবে”।

নিহত কুলসুমের স্বামী খোকন মিয়া বলেন, কি অপরাধ ছিল আমার স্ত্রীর। ভোট কেন্দ্রের বাইরে বসেছিল ফলাফল জানাতে। তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

নিহত খোরশেদ আকন্দের ছেলে এরশাদ বলেন, ৭০ বছর বয়সী আমার বাবা কি হামলা করার ক্ষমতা রাখে। উৎসব মুখর ভোটের ফলাফল দেখার জন্য দুরে বসে ছিল। তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো। আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।

ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে কালাইহাটা গ্রাম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দূর্গ। বগুড়া শহরে আলোচিত মুক্তিযোদ্ধাদের সেল্টার। একারনে পাক বাহিনী কালাইহাটাতে হামলা করেছিল। সেখানে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর গুলি খেয়ে মরতে হলো গ্রামবাসীকে। সঠিক তদন্ত এবং দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। তবে তিনি আশংকা করছেন, পুলিশ উল্টো মামলায় গ্রামবাসীকে হয়রানী করে কিনা।

এব্যাপারে বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ইউনুস আলী জানান, গুলিতে নিহতদের লাশ বৃহস্পতিবার রাতে দাফন হয়েছে। নিহতদের পরিবারের ক্ষতিপুরন দিতে হবে এবং গ্রামবাসী যেন কোন মিথ্যা মামলায় না জড়িয়ে পড়ে এ বিষয়ে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে।