বগুড়ায় ধান কাটার শ্রমিকের কাজে এসে মুক্তিপনের জন্য শিশুকে খুন : গ্রেফতার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ায় ধান কাটার শ্রমিকের কাজে এসে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ৯ বছরের শিশু রাজ মামুনকে অপহরনের পর খুন করার ঘটনায় ফরিদুল (২৮) নামে এক ব্যক্তি গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত ফরিদুল ইসলাম রংপুর জেলার পীরগাছা থানাধীন চররহমত এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে।

জানাগেছে, গত ৫ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে এশার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বেরা পাচবাড়িয়া এলাকার সুলতান শেখের ছেলে রাজ মামুন (৯) নিখোঁজ হয়।

এরপর মামুনের বাবা সুলতানের ফোন নম্বরে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে তার ছেলেকে ওই এলাকার রাজার মোড় অপহরন করা হয়েছে বলে জানায় এবং মুক্তিপন হিসাবে ২০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে দাবি করে।

এবিষয়ে ৭ ডিসেম্বর সুলতান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৪, তাং-০৭/১২/২০২১ইং)।

এদিকে মামলা দায়েরের পর পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা রাজ মামুনকে উদ্ধারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। এক পর্যায়ে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরকারী ফরিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।

পরে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেখানো মতে সারিয়াকান্দি থানাধীন বেড়া পাঁচবাড়িয়া গ্রামস্থ চর এলাকার একটি ধান ক্ষেত থেকে শিশু রাজ মামুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী ফরিদুল জানায় যে, ঘটনার কিছুদিন পূর্বে বগুড়া সদর থানাধীন এরুলিয়া এলাকায় ধান কাটার কাজের জন্য আসে। সে অনেক টাকাঋণগ্রস্থ হওয়ায় ধান কাটার পারিশ্রমিকে তাহার চাহিদা না মেটায় সে এরুলিয়া এলাকা থেকে সারিয়াকান্দি থানাধীন জামথল এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

পরবর্তীতে গত ৫ ডিসেম্বর বিকালে সারিয়াকান্দি নদী পার হয়ে জামথল গ্রামে যায় ফরিদুল। সেখাানে গিয়ে কোন কাজ না পাওয়ায় গ্রামের একটি মুদিখানা দোকানের পাশে অবস্থান করে কয়েকটি বাচ্চা ছেলেদের খেলা করতে দেখে তাদের মধ্যে থেকে একজনকে অপহরন করার জন্য পরিকল্পনা করে ফরিদুল।

সেই পরিকল্পনা মোতাবেক মুদিখানা দোকানের পাশে অবস্থান করতে থাকে সে। মাগরিবের নামায শেষে তাহাদের মধ্যে থেকে শিশু রাজ মামুনকে অপহরণ করার চেষ্টা করলেও তার সাথে অনেকেই থাকার কারণে সে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে এশার নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

পরবর্তীতে এশার নামায শেষে ফরিদুল পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক শিশু রাজ মামুনকে ঘুঘু পাখির বাচ্চা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধান ক্ষেতের পাশের একটি গাছের নিচে নিয়ে যায়।

রাত গভীর হলে রাজ মামুন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে তাৎক্ষণিক আসামী ফরিদুল তাকে গলা টিপে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে মৃত দেহ ধান ক্ষেতে ফেলে রাখে। তারপর সে ওই গ্রামের আজাহার আলীর মুদিখানা দোকান থেকে কৌশলে দোকানদারের ফোন নম্বর নিয়ে উক্ত গ্রাম থেকে চলে যায়।

এদিকে হত্যার পরের দিন ৬ ডিসেম্বর দোকানদার আজাহারকে ফোন করে রাজ মামুনের বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায় ফরিদুল। তখন দোকানদার আজাহার বলে রাজ মামুনের বাবা সুলতান এখানে উপস্থিত আছে বলে তার কাছে ফোন ধরিয়ে দিলে আসামী ফরিদুল তার ছেলের সন্ধান দিবে বলে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবি করে।

বগুড়া ডিবির ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, শিশু রাজ মামুনকে অপহরণ ও হত্যাকান্ডের সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা, তা আরো তদন্ত করা হচ্ছে।