যাযাবরদের ভ্রাম্যমান পাঠশালা
ঠাকুরগাঁওয়ে খোলা আকাশের নিচে যাযাবরদের ভ্রাম্যমান পাঠশালা

আপেল মাহমুদ, রুহিয়া (ঠাকুরগাঁও) থেকে :

ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়া মধুপুর গ্রামে তাবু খাটানো যাযাবর দলের মানুষদের ঝড় বৃষ্টি নিয়ে মাথা ব্যথা না থাকলেও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আছে উদ্বেগ। তাইতো বেঞ্চ চেয়ার টেবিল ছাড়াই খোলা আকাশের নিচেই চলে তাদের পাঠদান।

সারা বছরই দলবেঁধে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ান যাযাবরেরা। সুবিধামতো জায়গা পেলে পলিথিনের তাবু টানিয়ে বসবাস করেন তারা। ভাসমান এই মানুষদের যেমন নেই কোন ঠিকানা, তেমনি হয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়ার সুযোগ।

এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলো এমন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হলেও স্বপ্ন দেখেন পরিবর্তন আসবে সন্তানের জীবনে।

পাঠাগারের একজন শিক্ষার্থীর মা লাকি আক্তার বলেন, আমি পড়ালেখার সুযোগ পাই নাই, আমার মেয়ে পড়ালেখা করতেছে, এতে ভালো লাগতেছে।

বেদে দলটির ইমাম আব্দুর রব জানান, আমরাতো বেদে সম্প্রদায়ের লোক, আমাদের মাঠে ঘাটে পরে থাকতে হয়। কেন না আমাদের জীবন যেভাবে নষ্ট হয়েছে এটাতো হয়েই গেছে। আমরা তো চাইনা যে আমাদের বাচ্চাদের জীবন এভাবে নষ্ট হোক। তবে আমরা আমাদের বাচ্চাদের জন্য পড়ার একটা ব্যবস্থা করছি।

স্থানীয় এক শিক্ষানুরাগী গিয়েছেন তাদের পাঠদান দেখতে, তিনি বলেন, বেদে সম্প্রদায় একটি যাযাবর জনগোষ্ঠী। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে তারা অস্থায়ী ভাবে বসবাস করে। সে কারনে তাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার সুযোগ থাকেনা। আজকে তাদের এই পড়াশোনার ব্যবস্থা দেখে আমি অনেক আনন্দিত।

শত প্রতিকূলতার মাঝেও অক্ষর জ্ঞানহীন থাকছেনা যাযাবর দলের শিশুরা। ভোরের আলো ফুটতেনা ফুটতেই বই খাতা হাতে তাবু ছেড়ে পাঠশালার পাটিতে বসে পড়ে শিশুরা। চোখে মুখে উপচে পরে উচ্ছ্বাস আর শেখার আগ্রহ।

ব্যতিক্রম এই পাঠশালায় আছে উদ্যমী শিক্ষক আর উচ্ছাসি একদল শিক্ষার্থী।

পাঠশালার শিক্ষার্থী পুতুল জানায়, আমাদের পাঠশালায় অনেক কিছু শিখেছি অ, আ শিখেছি, ছড়াও শিখেছি।

পাঠশালার শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলছেন, আমরা বেদে বহর নিয়ে যেখানেই যাই প্রতিদিন কাজের ফাঁকে যে সময় পাই ওই সময় থেকে এক দেড় ঘন্টা বাচ্চাদের লেখাপড়া শিখাই। এই ভ্রাম্যমান পাঠশালা, যেন যাযাবরদের গন্তব্যহীন যাত্রা সাথী।

বেদে দলটির সর্দার নবীর উদ্দিন বলেন, অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষ পৃথিবীতে অচল। তাই বাচ্চাদের এতটুকু শিখিয়ে দিতে পারলেই, তারা চলে ফিরে খেতে পারবে।