সিরাজগঞ্জে অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় ৩ সদস্য আটক : যাত্রীবাহি বাস জব্দ

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :
সিরাজগঞ্জে অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় ৩ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-১২ এর একটি দল। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা ১ যাত্রীবাহী বাস (রেজি নাম্বার- রাজ মেট্রো-গ ১১-০১৩২) নগদ-২ হাজার ১৩৪ টাকা এবং ৩ টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

আটককৃতরা হলো- নাটোর জেলার বড়াই গ্রাম থানাধীন জোয়ারী গ্রামের বাবুল কুমার দাসের ছেলে শ্রী সুজন কুমার দাস (২৫), একই থানাধীন কালিকাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ পাঠানের ছেলে বিপ্লব পাঠান (৪৩) ও দিয়াপাড়া গ্রামের প্রামানিকের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৮)।

আটককৃতরা অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করিয়ে বাসে থাকা যাত্রীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।

শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) তারিখ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১২ এর স্পেশাল কোম্পানীর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানী কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মিঃ জন রানার নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা থানাধীন চরিয়া কালিবাড়ি গ্রামের নাটোর-ঢাকাগামী মহাসড়কে সামনে পাকা রাস্তা থেকে ওই অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের আটক করে।

র‌্যাব জানায়, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার শিকারপাড়া এলাকার মৃত জাকের হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি কাচিকাটা থেকে রাজদীপ পরিবহনের একটি বাসযোগে ব্যবসায়িক কাজে বগুড়া উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাস চলাকালীন সময়ে একজন বই বিক্রেতা হকার ওই গাড়ীতে থাকা ১০ থেকে ১২ জন যাত্রীকে প্রথমে বই পড়ার জন্য দেয় এবং বই পড়াকালীন সময়ে বিশেষ কৌশলে ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার জন্য বলে কিন্তু আলমগীর হোসেন তা গ্রহণ করেন না।

একই সাথে বাসে থাকা অন্য বই পড়ুয়া যাত্রীগণ ইসবগুলের ভুষি পানি সাথে সাথে গ্রহণ করে। পরবর্তীতে কিছু সময় অতিবাহিত হলে ওই হকার সবাইকে বিশেষ রোগের চিকিৎসার কথা বলে হালুয়া পরিবেশন করে এবং সবাইকে অবগত করে যে, এই হালুয়া খেলে তাদের রোগ নিরাময় করা সহজ হবে।

হকারের কথায় উৎসাহিত হয়ে বাসের ড্রাইভার ও সুপারভাইজার সহ অন্যান্য যাত্রীগণ খাবার হিসেবে হালুয়া গ্রহণ করে। সকলের হালুয়া খাওয়া শেষ হলে ব্যবসায়ী আলমগীরকে ওই হকার হালুয়া খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। কিন্তু আলমগীর হালুয়া খেতে অসম্মতি প্রকাশ করলে বাসের সুপারভাইজার তাকে হালুয়া খেতে বাধ্য করে।

হালুয়া খাওয়ার কিছুক্ষণ পর আলমগীর উপলব্ধি করতে পারেন যে তার মাথা ব্যথা হচ্ছে, সাথে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই তিনি তাড়াশ থানাধীন মান্নান নগরে গাড়ী থেকে নামার জন্য গাড়ীর গেটে পৌঁছায়, কিন্তু গেটে থাকা সুপারভাইজার তাকে গাড়ী থেকে নামতে না দিয়ে জোর করে অন্য একটি সিটে বসিয়ে দেয়।

এরপর ব্যবসায়ী আলমগীর অচেতন হয়ে যায়। অচেতন থাকাকালীন সময় তার সঙ্গে থাকা ৩ লক্ষ ২ হাজার টাকাসহ স্মার্ট মোবাইল ফোন অপ্সান পার্টির সদস্যরা ছিনিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে দুপুর দেড়টার দিকে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানাধীন কাচিকাটা বাসস্ট্যান্ডের পাশের্^ স্থানীয় লোকজন ব্যবসায়ী আলমগীরকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার এবং তার বাসায় খবর দিলে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে ভুক্তভোগী আলমগীর সিরাজগঞ্জের র‌্যাব-১২ তে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

র‌্যাব-১২ এর স্পেশাল কোম্পানীর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানী কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মিঃ জন রানা জানান, আটককৃতরা অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করিয়ে বাসে থাকা যাত্রীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।

গ্রেফতারকৃত অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর উদ্ধারকৃত আলামতসহ তাদেরকে নাটোর জেলার গুরুদাশপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।