স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনট উপজেলার চিকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল কাদির শিপনের বিরুদ্ধে সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, দূর্ণীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন ১০ জন ইউপি সদস্য।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) দুপুরে জোড়শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান শিপনের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন তারা।
তবে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শুধু অনাস্থা জ্ঞাপনই নয়, তার বিরুদ্ধে আদালতে কয়েকটি মামলাও করেছেন কয়েক জন ইউপি সদস্য।
লিখিত সংবাদ সম্মেলনে চিকাশী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ১,২,৩নং ওয়ার্ডের সদস্য শরিফুন বেগম ও ৭নং ইউপি সদস্য রোকনুজ্জামান বিল্পব বলেন, চিকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নাজমুল কাদির শিপন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, টিআর-কাবিখা, কাবিটা, এলজিএসপি, এডিপি, ভিডিজি, ভিজিএফ, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা কার্ড সহ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যপকভাবে অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করে আসছে।
নীতিমালা না মেনে ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল কাদির শিপন পরিষদের ১০ জন ইউপি সদস্যকে উপেক্ষা করে এককভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। অনেক প্রকল্পে ইউপি সদস্যদের সভাপতি বানিয়ে নিম্নমানের কাজ করে সরকারী টাকা অত্মসাত করছে।
এসব বিষয়ে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান শিপনকে বিবাদী করে ইউপি সদস্য শরিফুন বেগম বগুড়ার আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এরপর ইউপি চেয়ারম্যান শিপনের বিরুদ্ধে ১০জন ইউপি সদস্য স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, বগুড়া জেলা প্রশাসক ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে প্রেরন করা হয়েছে।
একারনে ১০ জন ইউপি সদস্যকেই দীর্ঘদিন ধরে পরিষদে ঢুকতে দিচ্ছেন না চেয়ারম্যান শিপন। তাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান শিপনের বিরুদ্ধে অনিয়ন, দূর্ণীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে অনাস্থা জ্ঞাপন করে স্বাক্ষর করেছেন ১০ জন ইউপি সদস্য।
ছোট চাপড়া গ্রামের নারী ইউপি সদস্য রাশেদা খাতুন জানান, চলতি অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চিকাশী ইউনিয়নের অন্তর্গত ছোট চাপড়া গ্রামের পাকা রাস্তা থেকে আব্দুল খালেকের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় ইটের সোলিং নির্মানের জন্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়।
উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে তাকে (রাশেদা) সভাপতি বানালেও জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে নিজের তদারকিতে নিম্নমানের কাজ করে ২ লাখ টাকা আত্মসাত করেন ইউপি চেয়ারম্যান শিপন। এছাড়া অধিকাংশ প্রকল্প কাজ না করেই অর্থ অত্মসাত করেছেন। সরকারী প্রতিটি প্রকল্প তিনি একভাবে পরিচালনা করছেন।
তবে ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল কাদির শিপন শুধু সরকারী প্রকল্পের টাকাই আত্মসাত করেননি, বরং একই পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য হারুনর রশিদের কাছ থেকেও ভিজিডি কার্ড দেওয়ার নামে ২৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ইউপি সদস্য হারুনর রশিদ বলেন, আমার ওয়ার্ডের ৬ জন দরিদ্র মানুষকে ভিজিডি কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ইউপি চেয়ারম্যান শিপন ২৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ৬ মাসেও কার্ডও দেয়নি, টাকাও ফেরত দেয়নি। এছাড়া তিনি ইউপি সদস্যদের সাথে সমন্নয় না করে বয়স্কভাতা, ভিজিডি কার্ড সহ বিভিন্ন কার্ড বিক্রি সহ ভিজিএফ তালিকার টাকাও আত্মসাত করেছেন।
সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পে ইউপি সদস্যদের সম্পৃত্ততা থাকার কথা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান লুটপাট করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তাই তার বিরুদ্ধে মামলা সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে এবং তাকে অনাস্থা জ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে ইউপি সদস্যদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চিকাশী ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল কাদির শিপন বলেন, ইউপি সদস্যরা নিজেদের স্বার্থের জন্য আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। তবে নিয়ম মেনেই সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন বলে তিনি দাবি করেন।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, চিকাশী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যরা কিছু দিন আগে যেসব অভিযোগ করেছিলেন, তা তদন্ত করা হচ্ছে। তবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থা জ্ঞাপনের কোন কাগজ এখনও পাইনি।