জাফরুল সাদিক, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি :
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রায় ১৫ মন ওজনের গরু বিক্রয় নিয়ে হতাশায় দিন কটছে রিক্সা চালক আমছার আলীর। স্ত্রী, দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার পৌর এলাকার কুঠিবাড়ী গ্রামে। জমি-জমা যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর সংসার চালানো কঠিক হয়ে পরে। তবে রিক্সা কেনার পর তা চালিয়ে দু’মুঠো ডাল ভাত ছেলে-মেয়েদের মুখে তুলে দেন তিনি।
সারিয়াকান্দি ছোট্ট পৌর শহরে রিক্সা চালিয়ে দৈনিক যে রোজগার হয়, তা দিয়ে সংসারের চাহিদা মোটেই পুরন হয় না। ধার-দেনা, এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসারের ঘানী টানেন তিনি। কোরবানী উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ১টি করে ষাড় গরু লালন পালন করে থাকেন। কোরবানীর সময় সে পশুটি বিক্রি করে মোটা টাকা হাতে পান তিনি। এ টাকা পেয়ে ধার-দেনা ও এনজিও ঋণ শোধ করেন।
গত বছর জুন মাসে ৪৯ হাজার টাকা দিয়ে ছোট আকারের ষাড় গরু কেনার পর সেটি লালন-পালন করতে থাকেন। এবার করোনার কারনে দেশ জুড়ে চলমান লক ডাউনে তার পালিত ষাড়টি কোরবানীর হাটে তুলতে পারছেন না। ফলে আমছার আলীর চোখে মুখে শুধুই হতাশা।
এ কথা শুধু আমছার আলীর না। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে উপজেলার খামারিদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। প্রতি বছরের মতো দেশের বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য এবারও সারিয়াকান্দিতে প্রায় ৪৫ হাজারেরও বেশি গরু-ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণ এবং ব্লাক বেঙ্গল গোটের কারণে সারাদেশেই সারিয়াকান্দির পশুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য বছর ঈদের এক-দেড় মাস বাকি থাকতেই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা পছন্দের গরু-ছাগল ক্রয়ের জন্য এ উপজেলার খামার ও হাটবাজার গুলোতে ভিড় করতেন। কিন্তু করোনার কারণে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২১ জুলাই কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে হিসাবে ঈদের আর ৯ দিন বাকি। কিন্তু করোনা রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে এখনো ব্যাপারীদের পা পড়েনি । উপজেলার পশুর হাট গুলোও বন্ধ। কবে উন্মুক্ত হবে সেটাও নির্দিষ্ট কেউই জানে না। দু একটি হাট চললেও ব্যাপারির দেখা মেলেনি তেমন একটা। হাটও শেষ হয়েও যায় তাড়াতাড়ি।
এ অবস্থায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত বিপুল সংখ্যক পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় এখানকার খামারিরা। এছাড়া বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার কারণে গত কোরবানির ঈদের প্রায় ২০-২৫ ভাগ অবিক্রিত পশু।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে এবারও যদি পশু বিক্রি করতে না পারেন তাহলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার খামারি একেবারেই পথে বসবেন। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত পশুর হাট চালু না হলে এ বছরও অর্ধেকেরও বেশি পশু অবিক্রিত থেকে যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমি ইউএনও সাহেবকে কোরবানীর হাটের জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাট চালু রাখার জন্য অনুরোধ করেছি। আশা করছি কোরবানীর জন্য হাট চালু হয়ে গেলে উপজেলার খামারীরা ও কোরবানীর জন্য গরু লালন-পালনকারীরা তাদের কোরবানীর পশুর ন্যায্য মূল্য পাবেন।