আপেল মাহমুদ, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :
কফি উন্নত পানীয় হিসেবে সারাবিশ্বেই ব্যাপক আদৃত। একসময় বাংলাদেশে কফির খুব একটা প্রচলন ছিল না। ধীরে ধীরে অনেকেরই পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে কফি।
দেশের বিভিন্ন জেলায় কফি চাষে লাভবান হয়েছে অনেকে। ঠাকুরগাঁওয়ে চা পাতার মতো বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশের কফির প্রয়োজনীয় চাহিদার সবটুকুই আমদানি নির্ভর। চায়ের তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও বাংলাদেশে কফির চাহিদা কম নয়।
ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া উপজেলার সিদ্দিকুর রহমান শানু এবং প্রকৌশলী এইচ এম আসিফ রব্বানী নামের দুইবন্ধু এ কফি চাষের উদ্যোক্তা।
তারা ঢোলারহাট ইউনিয়নে কফির বাগান গড়ে তুলেছেন। অনেকেই তাদের এই কফি বাগান দেখতে ভিড় করছেন। তারাও কফি চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। চা, লিচু, সুপারি সহ বিভিন্ন ফল-ফসলের পাশাপাশী তারা সখের বশে গড়ে তুলেছেন এ কফির বাগান। কৃষি বিভাগও বলছে কফি চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
সরেজমিন দেখা যায়, সিদ্দিকুর রহমান এবং আসিফ রব্বানীর পাঁচ শতাংশ জমিতে কফি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে প্রত্যেক শাখা-প্রশাখা ফলে ভরপুর। কিছু কিছু ফল পাকতেও শুরু করেছে। কফির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলনের চাষাবাদ করা হয়েছে।
দর্শনার্থীরা বলছেন, নিরাপদ ফল-ফসল উৎপাদনে এলাকার মানুষের কাছে সিদ্দিকুর রহমান ও আসিফ রব্বানী আদর্শ। অনেকেই প্রতিদিন আসেন কফি বাগান দেখতে। জীবনে প্রথম কফি গাছ ও বাগান দেখে তারা অভিভুত। অনেকেই কফি বাগান করার জন্য তাদের থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
ওই কফি বাগানের শ্রমিকরা বলেন, ছোট ছোট, গোল গোল সবুজ কফিতে ভরপুর বাগান। সবুজ কফিগুলো পেকে লাল হবে এবং এরপর কালো হবে।
কফি চাষি সিদ্দিকুর রহমান শানু বলেন, তারা দুইবন্ধু মিলে এ কফি চাষ করছেন। প্রত্যেকটি গাছে কফির ভালো ফলন হয়েছে। নভেম্বর মাসেই এ কফিগুলো পরিপক্ক হয়ে যাবে। সরকারী সহায়তায় কৃষকদের যদি কফি চাষে আগ্রহী করা যায়, তাহলে কফির আমদানী নির্ভরতা কমে আসবে। এতে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
অপর কফি চাষি প্রকৌশলী এইচ এম আসিফ রব্বানী জানান, কফি চাষে চায়ের চেয়ে খরচ কম। বছরে একবার ফসল হয়। চা-গাছের মতো ছাঁটাই, সেচ লাগে না। রোগবালাই কম। আমি মনে করি, এতে করে চা-বাগানের জমির সুষ্ঠু ব্যবহার হবে। চা-বাগানের জন্য কফি একটি সম্পূরক ফসলও হতে পারে। কফি একটি অর্থকরী ফসল বিধায় এটি চাষ করে উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যেমন বেকারত্ব সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষ্ণ রায় বলেন, কফি চাষে কৃষি বিভাগ বিভিন্ন কারিগরী পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কৃষি উদ্যোক্তাগণকে কফি চাষে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কফির স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও বৃদ্ধি করা যাবে।