স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়া জেলার সদর উপজেলার ফাঁপোড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমিুনল ইসলাম রকি (৩৫) হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী গাউছুল আজম সহ ৭ জনকে দেশি এবং বিদেশী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১২ এর একটি দল।
শনিবার (৩১ জুলাই) দিবাগত রাতে বগুড়া ও রংপুরে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বগুড়া সদরের ফাঁপোড় গ্রামের আঃ মজিদের ছেলে মামলার প্রধান আসামী গাউছুল আজম (২৮), একই গ্রামের রজাউল করিমের ছেলে ২নং আসামী ফুয়াদ হাসান মানিক (২৯), কৈচর, গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে ৪নং আসামী মেহেদী হাসান (১৮), ফাঁপোড় গ্রামের আখের আলীর ছেলে ১০নং আসামী আরিফুর রহমান (২৮) এবং হত্যাকান্ডে জড়িত মালগ্রাম এলাকার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছেলে আলী হাসান (২৮), কৈচর গ্রামের মাজেদ আলীর ছেলে ফজলে রাব্বী (৩০), বেলগাড়ী গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে আঃ আহাদ (২০)।
তবে এরআগে গত ২৯ জুলাই এই হত্যা মামলার ৮নং আসামী শাজাহান আলীকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া সদর থানা পুলিশ। শাহাজান আলী বগুড়া সদরের ফাঁপোড় মধ্যপাড়া এলাকার মৃত সাদেক আলীর ছেলে।
জানাগেছে, গত ২৭ জুলাই রাত ৯ টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার ফাঁপোড় হাটখোলা এলাকার জনৈক আঃ সামাদের মুদি দোকানের সামনে মসজিদে এশার নামাজ শেষে বের হওয়ার সময় ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী আওয়ামীলীগ নেতা মমিুনল ইসলাম রকি (৩৫) কে রামদা, ছোড়া ও চাপাতি দিয়ে পায়ে ও মাথায় কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষ আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ১০টার দিকে মমিনুল ইসলাম রকিকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রকি বগুড়া জেলার সদর উপজেলার ফাঁপোড় ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
এঘটনায় গত ২৯ জুলাই নিহত রকির ভাই রুকু হোসেন বাদী হয়ে ১২জনের নাম উল্লেখ্য করে এবং আজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনার পর থেকেই র্যাব-১২, বগুড়া ক্যাম্পের কয়েকটি গোয়েন্দা দল ও আভিযানিক দল হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য মাঠে নামে এবং হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করেন।
র্যাব-১২, বগুড়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন (জি), বিএন এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানাধীন ছোট হাজিরপুর ফকিরগঞ্জ গ্রামের জনৈক রমজান (২০) আলীর বসতবাড়ী থেকে ৫ জনকে আটক করা হয়। এরপর তাদের দেয়া তথ্যমতে বগুড়া জেলার সদর থানাধীন ফাঁপোড় উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে মামলা প্রধান আসামী সহ আরো ২ জনকে আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ৩ রাউন্ড গুলি ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে জানায়, আসামীরা দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল। একারনে আওয়ামীলীগ নেতা রকি আসামীদেরকে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে বাধা প্রদান করত।
এ ছাড়াও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগ নেতা রকি আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন। আসামীদের মনে ভয় ছিল। রকি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তাদের অবৈধ কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ হবে। এসব বিষয় নিয়ে প্রধান আসামী গাউছুল তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গাউছুল ও সহযোগিরা একত্রিত হয়ে ধারালো চাপাতি ও ধারালো ছোরাদ্বারা রকিকে কুপিয়ে হত্যা করে।
আসামীদের ভাষ্যমতে, গাউছুলের পরিকল্পনায় এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা রকিকে হত্যার পর থেকেই বগুড়াসহ আশেপাশের জেলার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেছিল। আসামীদের গ্রেপ্তার করে বগুড়া সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।