জাফরুল সাদিক, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি :
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় করোনার কারনে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়লেও বন্ধ হয়নি অবৈধ বালুর ব্যবসা। এতে বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
গত ১১ বছরেও বালু মহালগুলো দেয়া হয়নি কোন ইজারা। কিন্তু তারপরও দিন-রাত সমান তালে চলছে অবৈধ বালু ব্যবসা। ফলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালে ৩১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ডানতীর সংরক্ষণসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়ছে। বালু ব্যবসায় জড়িত গুটি কয়েক জন হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার যমুনা সহ বিভিন্ন নদ-নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা ক্ষমতা দাপট দেখিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদী প্রবাহমান। নদীটির বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করে যমুনা নদীর ডান তীরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় সমান বালুর স্তুপ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, যমুনা নদীর ডান তীরে কমপক্ষে ৮টি স্থানে এই পাহাড় সমপরিমান বালুর স্তুুপ রয়েছে। সেগুলো মধ্যে, কুতুবপুর ইউনিয়নের দেবডাঙ্গায় রয়েছে দ’ুটি বালুর পয়েন্ট, ধলিরকান্দির সামনে দু’টি, চন্দন বাইশা ইউনিয়নের ঘুঘুমারি গ্রামে দোলাল চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে ১টি, কামালপুর ইউনিয়নের রহাদহ যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ সংলগ্ন ১টি এবং পাশা-পাশি আরো ২টি স্থানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় একদিকে যেমন ভাঙ্গনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন সময় নদীর তীর রক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া এই বালু দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের কারনে প্রধান প্রধান সড়কে বিভিন্ন স্থানে দেবে ও ভেঙ্গে গেছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক খানাখন্দ। দেবে যাওয়া ও খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে যাত্রীবাহী বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে প্রতিনিয়তই।
উপজেলারগুটি কয়েক সরকার দলীয় নেতারা এসব অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছেন। বালু ব্যবসায় জড়িত গুটি কয়েক নেতারা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হলেও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেকটাই দেখেই না দেখার ভান করে চলছেন।
তাছাড়াও কুতুবপুরের তালতলায় বালুবাহী ট্রাকের ধাক্কায় এক শিশুর মুত্যু হয়েছে এবং ঘুঘুমারি দোলাল চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে বালুর পয়েন্টে পানিতে ডুবে আর একটি শিশুর মৃত্যু হয়। গত তিন বছর আগে ভেলাবাড়ী ইউনিয়নে বালু ব্যবসায়ীদের বালু উত্তোলোনের সময় ড্রেজার মেশিনের সঙ্গে আঘাত পেয়ে আসমা নামের তিন সন্তানের জননীর মৃত্যু ঘটে। তবে এসবের পরেও নীরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এ ব্যাপারে সারিয়াকান্দি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম পটল বলেন, ঈদ গাঁ মাঠ, মসজিদ, মন্দিরের মাটি ভরাট করতে গেলে প্রশাসনের তরফ থেকে মেশিন দিয়ে বালু তোলা যাবেনা বলে বার বার নিষেধ করেন। অথচ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাহাড় সম পরিমাণ বালু স্তুপ করে পরে তা বিক্রি করা হলেও প্রশাসনের কারো কেন নজরে আসেনা। যমুনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহণের কারনে পরিবেশ ও রাস্তাঘাটের যে বিপর্যয় হচ্ছে তাতে প্রশাসনের নজর দেয়া দরকার।
অবৈধ বালু ব্যবসায় জড়িত উপজেলার চন্দনবাইশা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন দুলাল বলেন, আমি কোন অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে জড়িত নই। যারা জড়িত আপনারা তাদেরকেই বলুন। আমার এখানে যে স্থানে বালুর স্তুপ করা হয়েছে সেটা আমার নিজস্ব সম্পত্তি। বালুর পয়েন্ট করার জন্য আমার প্রায় ৪০ বিঘা জমি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। এই জমির মাসিক ভাড়া বাবদ ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকি মাত্র।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রাসেল মিয়া বলেন, কোভিড-১৯ এর কারনে আমাদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বন্যার কারনে প্রতিদিন ভিন্ন রকমের পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সারিয়াকান্দি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) আব্দুর রহমান তাসকিয়া বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। বিষয়টি তারা গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।