শাহজাহান আলী, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং অতিবৃষ্টির কারণে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় পানি বেড়ে কাজিপুর পয়েন্টে বিপদ সীমার ৪৯ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বুধবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এতে করে প্রায় ২ হাজার ৫৬৮ হেক্টর রোপা আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতির পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাজিপুরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এরই মধ্যে চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়া, মনসুরনগর, চরগিরিশ, নিশ্চিন্তপুর, খাসরাজবাড়ী ও তেকানীসহ গান্ধাইল, শুভগাছা ও মাইজবাড়ি ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় রোপা আমনের ক্ষেতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দ্রুত এই পানি নেমে না গেলে ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, কাজিপুর উপজেলার ১২ ইউনিয়নে রোপা আমনের চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে যমুনার পানি বেড়ে গিয়ে চর ও বিলে অঞ্চলের ২ হাজার ৫৬৮ হেক্টর রোপা আমন ধান, ৩০ হেক্টর জমির বীজ তলা, ২ হেক্টর জমির কলা, ১৫ হেক্টর জমির সবজী ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে গবাদীপশু নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন। কেননা খাদ্য সংকট সহ বাসস্থানের সংকট সৃষ্টি হবে। বানিয়াযান খাল খনন করার ফলে ১০ বছর পর বিলে এলাকা কৃষকরা এ বছর শতাধিক হেক্টর জলাবদ্ধ জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে কাজিপুরের কৃষকেরা এবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। ইতোমধ্যে আমন ধানের রোপিত চারা অনেকটাই সবুজ হয়ে উঠেছিল।
মনসুর নগর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল গনি জানান, গতবারও বন্যার কারণে ভালো ফলন পাইনি। এবারও সব খরচা সম্পন্ন হয়েছে। এখন আবার জমিতে পানি ঢুকছে, পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো।
গান্ধাইলের কৃষক মশারফ বলেন, চড়া দামে শ্রমিক নিয়ে ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। গাছ বেশ সবুজ হয়েছে। প্রথমবারের সারও ছিটিয়েছি। কিন্তু কয়েকদিন হলো অতিবৃষ্টির কারণে ধান পানিতে ডুবে গেছে। দ্রুত পানি না কমলে অনেক ক্ষতি হবে।
কাজিপুর উপজেল কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়ন সহ গান্ধাইল ও মাইজবাড়ির আংশিক ফসলি জমিতে পানি ঢুকেছে। এতে প্রায় ২২ হাজার কৃষকের মোট ২৫ হাজার ৬৮ হেক্টর জমির রোপা আমনের ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউল করিম জানান, অল্প সময়ের মধ্যে পানি নেমে গেলে কৃষকের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। যদি দীর্ঘকাল ব্যাপী পানি থাকে, তাহলে এবারও কৃষকগণ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে চরগিরিশের চরডগলাস, মনসুরনগর ইউনিয়নে দুটি ব্রীজ ভাঙ্গনের হুমকিরমুখে পড়েছে। খাঁশরাজবাড়ি,নাটুয়ারপাড়া রক্ষাবাধে ধ্বস নেমেছে। ঐ সমস্থ এলাকায় মানুষজন ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে। অপরদিকে বানভাসি মানুষদের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কাজিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একেএম শাহা আলম মোল্লা জানান, চরাঞ্চলের বানভাসিদের জন্য জি আর ৩০ মেট্রিকটন চাল ও ইউনিয়ন প্রতি ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে এগুলো বিতরণও শুরু হয়েছে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, বানভাসিদের বিষয়ে সব সময় খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।