স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ায় মোটরসাইকেল ছিনতাই করার জন্যই বন্ধুকে খুন করেছে পাষন্ড বন্ধুরা। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১০ ঘন্টা পরে গোয়েন্দা তথ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার চাতাল শ্রমিক ইব্রাহিম হোসেন (২১) হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে বগুড়া জেলা পুলিশ।
এঘটনায় জাহিদ হাসান মামুন (১৯) নামে এক পাষন্ড বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ফুলতলা গ্রামের খন্দকারটোলা এলাকার হানিফ সোনার ছেলে।
জানাগেছে, নিহত ইব্রাহিম হোসেন সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ব্রাহ্মনবয়রা ইউনিয়নের চায়নাবাদ গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। সে গত ৪ মাস আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মামা সামছুল বারীর ধানের চাতালে কাজ শুরু করে ইব্রাহিম। সেই সুবাদে ওই এলাকায় স্থানীয় যুবক জাহিদ হাসান মামুন সহ আরো কিছু বখাটে ছেলেদের সাথে তার বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পুলিশ জানায়, নিহত ইব্রাহিম তার মামার ব্যবহৃত নীল রংয়ের এ্যাপাচি আরটিআর মোটরসাইকেল নিয়ে ব্যবসার কাজে বিভিন্ন এলাকায় চলাফেরা করতো।
গত সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বন্ধু জাহিদ নতুন এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে ইব্রাহিমকে শেরপুর থেকে বগুড়া শহরে ডেকে নেয়। এরপর বগুড়া শহরে ইব্রাহিমকে সাথে নিয়ে মদ কিনে আরো কয়েক জন বন্ধু সহ খাওয়ার কথা বলে কৌশলে গাবতলী থানাধীন মহিষাবান ইউনিয়নের পাঁচমাইল টু গোলাবাড়ী যাওয়ার পাকা রাস্তার দক্ষিণ পাশে নিশিন্দারা গ্রামের পরিত্যক্ত ইটভাটার মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইব্রাহিম, জাহিদ সব অন্যান্যরা সেখানে মদ পান করে।
এরপর রাত প্রায় ১টার পরে ইব্রাহিম হোসেনের গলায় ধারালো ব্লেড দিয়ে গলা কাটে এবং মৃত ভেবে সেখানে ফেলে রেখে মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায় তারা। পরে ঘাতকেরা চলে গেলে জীবন বাঁচানোর জন্য সেখান থেকে দৌড়ে পাকা রাস্তার পাশে সোহাগ নামের এক মুদি দোকানের সামনে গিয়ে মাটিতে পড়ে যায় ইব্রাহিম। তখন দোকানদার সোহাগ তার কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে তার বাবা ও গাবতলী থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়।
পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইব্রাহিমকে গলা কাটা গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ইব্রাহিম মারা যায়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী (বিপিএম-সেবা) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার পরপরই গাবতলী থানা সহ কয়েকটি টিম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চালায়।
একপর্যায়ে একটি বিশ্বস্ত সুত্র ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকান্ডে জড়িত জাহিদকে মঙ্গলবার সকালে বগুড়া শহরের নাটাইপাড়া ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেলটি নাটাইপাড়া আপন গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেফতারকৃত জাহিদ হাসানকে আদালত সোপর্দ করে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে। এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদেরকেও আটক করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ, (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন, (সদর সার্কেল ও মিডিয়া মুখপাত্র) ফয়সাল মাহমুদ, সহকারী পুলিশ সুপার (নন্দীগ্রাম ও গাবতলী সার্কেল অতিঃ) রাজিউর রহমান ও গাবতলী মডেল থানার অফিস ইনচার্জ (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।