ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনট উপজেলার চাঞ্চল্যকর মহিলা ইউপি সদস্য রেশমা হত্যাকান্ডের ঘটনায় মুল হত্যাকারী আবদুল লতিফ শেখকে (৬০) মুন্সিগঞ্জ সদর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১২। শুক্রবার (২৫ মার্চ) র্যাব-১২ এর কার্যালয়ে এক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এতথ্য জানানো হয়।
গ্রেফতারকৃত আবদুল লতিফ শেখ ধুনট উপজেলার মৃত আহাদ বকশ্্ শেখের ছেলে। এরআগে ২০০৯ সালে বগুড়াতে একটি ধর্ষণ মামলায় সে ৭ মাস কারাভোগের পর জামিনে ছিল।
জানাগেছে, নিহত রেশমা খাতুন মথুরাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের স্ত্রী এবং তিনি মথরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭,৮,৯নং সংরক্ষিত আসনের সদস্য ছিলেন। ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রেশমা খাতুন হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায়। গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের কুঁড়িগাতি গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে ওই নারী ইউপি সদস্যের লাশ উদ্ধার করে ধুনট থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত রেশমার ভাই বাদী হয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বগুড়ার ধুনট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকান্ডটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এদিকে হত্যাকান্ডে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব। এই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ মার্চ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১২ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে রেশমার হত্যাকারী আব্দুল লতিফ শেখকে (৬০) গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আব্দুল লাতিফ শেখ তার স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে জানায় যে, হত্যাকান্ডের প্রায় ৭ মাসপূর্বে ইউনিয়ন পরিষদে কম্বল বিতরণের একটি অনুষ্ঠানে ইউপি সদস্য রেশমার সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে রেশমার সাথে লতিফ শেখ ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা করে। এসময় তারা ইউনিয়ন পরিষদ ও আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন সময় সাক্ষাত করতো।
২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লতিফ কৌশলে রেশমাকে ধুনটের মথুরাপুর এলাকার একটি ইট ভাটার পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে আলাপ চারিতার এক পর্যায়ে কৌশলে রেশমাকে পানির সঙ্গে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় রেশমা তাকে বাঁধা দেয়। একপর্যায়ে লতিফ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
এদিকে ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে এবং পূনরায় কারাভোগ করতে হতে পারে এই আশংকা থেকে সে রেশমাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে মৃতদেহটি সেখানে রেখেই পালিয়ে যায়।
এরপর নিজেকে সন্দেহের উর্দ্ধে রাখতে সে কৌশলে রেশমার মৃতদেহটি উদ্ধার কাজে স্থানীয়দের সহায়তা করে এবং পরবর্তীতে দাফন কার্যেও অংশগ্রহণ করে। সেই সাথে রেশমার পরিবারের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখে।
কিন্তু পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেফতার হতে পারে এই আশংকা থেকে সে তার নিজ এলাকা ত্যাগ করে প্রথমে ছদ্মবেশী শ্রমিক হিসেবে নোয়াখালীতে কিছুদিন কাজ করে এবং পরবর্তীতে মুন্সিগঞ্জে আত্মগোপন করে।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত লতিফ ছোটবেলা থেকেই ফার্নিচার তৈরীর কাজ করত। পরবর্তীতে সে তার নিজের বাড়িতেই কর্মচারী রেখে ফার্নিচার তৈরী করে তা বিক্রি করত। গ্রেফতারকৃত লতিফের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে বগুড়াতে একটি ধর্ষণ মামলা রয়েছে এবং ওই মামলায় সে ৭ মাস কারাভোগ করেছে। বর্তমানে ওই ধর্ষণ মামলাটি চলমান রয়েছে বলেও জানায় র্যাব।
এব্যাপারে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রেশমার হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারকৃত আসামীকে ধুনট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রীয়া চলছে।