নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা: বগুড়া
‘প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ আগামী বছরেই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। আর এই বহুল প্রতিক্ষিত রেলপথ চালু হলে বগুড়া থেকে ঢাকার দুরত্ব ১২০ কিলোমিটার কমে আসবে।
কনিবার (২৩ এপ্রিল) প্রস্তাবিত প্রকল্পের স্থান পরিদর্শন শেষে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ‘তবে শুধু বগুড়া নয়, ‘উত্তরাঞ্চলের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতার যাচাইকাজ চলছে। আশা করছি চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের প্রথম দিকে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান হবে।’
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার জানান, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণে প্রাথমিক একটি নকশা প্রণয়ন করা হলেও তা চুড়ান্ত হয়নি। চুড়ান্ত নকশায় যাতে কোন ভুল-ত্রুটি না থাকে সেজন্য রেল মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন প্রকল্পের সম্ভব্যতা যাচাই কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে শনিবার তিনি বগুড়া সফর করেন।
তিনি আরো জানান, একই কারণে এর আগে গত ১২ এপ্রিল তিনি ঢাকায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বগুড়া ও সিরাজঞ্জ জেলার দুই জেলা প্রশাসক, প্রকল্প এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই সভায় মন্ত্রী প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখার কথা জানান।
শনিবার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বগুড়ায় এসে প্রথমে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা রেল পথের কারণে সৃষ্ট জানজট পরিস্থিতি দেখতে কয়েকটি লেভেল ক্রসিং এলাকা ঘুরে দেখেন।
পরে তিনি বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনে চলমান উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এরপর মন্ত্রী বগুড়া শহরের তিনমাথা রেলগেটের পশ্চিমে প্রস্তাবিত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ নতুন রেলপথ নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেন।
তবে রেলপথের কারণে বগুড়া শহরে নিত্যদিন সৃষ্ট যানজট নিরসনে কোন উদ্যোগ নেওয়া হবে কি’না- এমন প্রশ্নের জবাবে রেল মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘যানজট নিরসনে শহরে লেভেল ক্রসিংয়ের ওভার ব্রীজ অথবা আন্ডার পাস নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে সরকারের।’ বগুড়া ত্যাগ করার আগে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বগুড়া জেলার শাজাহানপুর এবং শেরপুর উপজেলায় প্রস্তাবিত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথের স্থানগুলো ঘুরে দেখেন।
এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হুমায়ুন কবির, প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম সিরাজী, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ সুবক্তাগীন, প্রকল্পের ভারতীয় ডেপুটি টিম লিডার কে শ্রীনিবাস রাও, বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুসহ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ সরাসরি রেলপথ না থাকায় এ অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে বর্তমানে সান্তাহার, নাটোর এবং পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুর পথে চলাচল করতে হচ্ছে। বাড়তি ওই পথ ঘুরতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে তেমনি বেশি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে। বগুড়া থেকে যেখানে সড়ক পথে ঢাকা পৌঁছাতে ট্রেনে ঘুরপথে যেতে লাগে ১০ থেকে ১১ ঘন্টা।
এমতাবস্তায় বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দারা ওই দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ নির্মাণের দাবি উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার বাসিন্দারাও ওই দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেন।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর সেটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের অধীনে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার এবং বগুড়ার কাহালু থেকে রাণীরহাট পর্যন্ত আরও ১২ কিলোমিটারসহ মোট ৮৪ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত ওই প্রকল্পের জন্য সম্প্রতি পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা আরো জানান, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত বর্তমানে দূরত্ব ১৯২ কিলোমিটার। আর ওই দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ স্থাপন করা হলে সেই দূরত্ব দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার কমে হবে ৭২ কিলোমিটার। নতুন ওই রেলপথ নির্মিত হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাতায়াতে অন্তত ৪ ঘন্টা কমে আসবে।