ধুনটে হত্যা মামলার পর সেই নবাবের বিরুদ্ধে এবার ছিনতাই মামলা!

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনট উপজেলার কুখ্যাত জুয়াড়ি হিটলু হত্যা মামলার প্রধান আসামী নবাব আলীর বিরুদ্ধে এবার ছিনতাই মামলা দায়ের করেছেন আরো এক ব্যক্তি। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনায় মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করেছে ধুনট থানা পুলিশ।

মামলাসূত্রে জানা যায়, গত ৮ মার্চ রাতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কালাইহাটা গ্রামের শাহাদত হোসেন তার স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে শাজাহানপুর উপজেলার শৈলধুকরি গ্রামের নানার বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দেন।

পথিমধ্যে রাত ১০টার দিকে ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ী গ্রামের বাবু বাজার এলাকায় পৌঁছলে নবাব আলী ও তার সহযোগীরা তাদের মোটরসাইকেল থামিয়ে ওই দম্পত্তিকে গাছের সাথে বেধে রাখে। এরপর তারা ওই দম্পতির কাছ থেকে মোটরসাইকেল, ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ও এক ভরি স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।

এঘটনায় শাহাদত হোসেন বাদি হয়ে গত ৭ এপ্রিল নবাব আলী সহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে বগুড়া আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করে তদন্তের জন্য ধুনট থানার ওসিকে নির্দেশনা প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ি সম্প্রতি ধুনট থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করে। তবে এপর্যন্ত নবাব আলীর বিরুদ্ধে সর্বশেষ জুয়াড়ি হিটলু হত্যা, ইতিপূর্বে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকৃত সরকারি চাল চুরির ১টি মামলা, অপহণের ১টি, মাদকের ১টি ও মারামারি ৩টি মামলা রয়েছে। তবে এই ছিনতাই মামলা সহ তার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা দায়ের হলেও একটি বারও গ্রেফতার হতে হয়নি এই নবাব আলীকে।

তবে কে এই নবাব আলী?
ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ি গ্রামের মৃত আবুল মন্ডলের ছেলে নবাব আলী মন্ডল (৫০)। তবে তিনি কোন দিন রাজনীতি না করলেও ২০১০ সালের দিকে সুকৌশলে নিমগাছী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য পদ বাগিয়ে নেন। এরপর বালু ও মাদক ব্যবসা সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে তার উত্থান হয়। এরপর তিনি টাকার ক্ষমতা জোরে নিমগাছী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের পদটিও আঁকড়ে ধরে অন্ধকার জগতে একক আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। কিন্তু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের বিদ্রাহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

যেভাবে পতন শুরু হলো এই নবাব আলীর:
তবে অল্প সময়ে উত্থান হলে, তার পতন যে অনীবার্য এটা হয়তো জানা ছিল না ক্ষমতাবান এই নবাব আলীর। তাইতো তিনি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অন্ধকার জগতে একক আধিপত্য বিস্তার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। আর অবৈধ সম্পদই কাল হয়ে দাড়িয়েছে তার। অধিক মুনাফার লোভে গত বছর সরকারি খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল কালো বাজারে বিক্রির দায়ে নবাব আলীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করে র‌্যাব।

সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল রাতে জুয়া ও মাদকের টাকা ভাগবাটোয়াকে কেন্দ্র করে ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ী গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে ৮টি মামলার আসামী কুখ্যাত জুয়াড়ি আরিফুল ইসলাম হিটলুকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করে তার লাশ একটি পরাতন কবরে মাটি চাপা দেয় দূর্বৃত্তরা।

এঘটনায় নিহত হিটলুর স্ত্রী শেফালী খাতুন বাদী হয়ে নিমগাছী ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ি গ্রামের মৃত আবুল মন্ডলের ছেলে নিমগাছী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিস্কৃত) নবাব আলীকে প্রধান আসামী করে ২০ জনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সর্বশেষ এই হত্যা মামলা ও ছিনতাই মামলাসহ নবাব আলীর বিরুদ্ধে এপর্যন্ত ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে এসব মামলায় কখনো কখনো ফেরারি আসামীর মতো জীবন যাপন করতে হলেও কোন সময় গ্রেফতার হতে হয়নি ক্ষমতাবান নবাব আলী ও তার সহযোগিদের।

নিমগাছী ইউনিয়নের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, প্রকৃতপক্ষে নবাব আলী ছিলেন একজন মামলাবাজ ব্যক্তি। স্বার্থের লোভে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তার পেশা।

ধুনট থানার এসআই মতিউর রহমান বলেন, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ি নবাব আলীর বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। এই মামলার বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, হত্যা মামলাসহ ৮টি মামলার আসামী নবাব আলী সহ তার সহযোগিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।