ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় এক বিধবার নাতনী ধর্মান্তরিত হয়ে হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে ওই বিধবার পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন ওই পরিবারকে সমাজচ্যুত করে ফতোয়া জারি করায় কোরবানীর এক টুকরো মাংসও জোটেনি তাদের ভাগ্যে। এমনকি গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকিসহ জারি করা হয়েছে বিভিন্ন বিধি নিষেধ।
স্থানীয়সূত্রে জানাযায়, উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের দিঘলকান্দি গ্রামের রজব আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম (৫৫)। ২০ বছর আগে তার স্বামীর মৃত্যুর পর পৈত্রিক ভিটায় বসবাস করে আসছেন। তার দুই মেয়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তালাকপ্রাপ্ত বড় মেয়ে ও এক নাতনীকে নিয়েই ছিল তার সংসার।
এমতাবস্থায় হালিমা বেগমের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাতনী সাবিনা খাতুন পাশ^বর্ত্তী কাজিপুর উপজেলার ভানুডাঙ্গা গ্রামের স্বপন ঘোষের ছেলে জয় ঘোষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে সাবিনা খাতুন বিয়ের দাবিতে ওই হিন্দু বাড়িতে অনশন পালন করতে থাকে। তখন স্থানীয় মাতব্বররা বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার সালিশী বৈঠক করলেও কোন সমাধান দিতে পারেননি।
একপর্যায়ে ছেলের পরিবার মেয়েটিকে ধর্মান্তরিত হওয়ার শর্তে পুত্রবধু করতে রাজি হয়। কিন্তু মেয়েটির পরিবার বিয়ের বিষয়টি অস্বীকৃতি জানালে প্রেমিক জয় ঘোষ মেয়েটিকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে হিন্দু রীতি অনুসারে বিয়ে করে একত্রে বাসবাস করে আসছে।
এদিকে দীর্ঘ ৭ মাস পর কোরবানীর ঈদের একদিন আগেই নাতনীর অপরাধের দায় চাপিয়ে দিয়ে দিঘলকান্দি গ্রামের স্থানীয় মাতব্বরেরা বিধবা হালিমা বেগমের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে। এছাড়া ওই পরিবারকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার ব্যাপারেও নির্দেশ দেয় স্থানীয় মাতব্বররা।
এতে নিরুপায় হয়ে হালিমা বেগম বাদী হয়ে স্থানীয় মাতব্বর খলিলুর রহমান (৫৮), কাজি (৫০), আফসার আলী (৪৫), ওসমান আলী (৪০) সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তবে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি অস্বীকার করে স্থানীয় মাতব্বর খলিলুর রহমান বলেন, বিধবা হিসাবে সমাজের কোরবানীর মাংস বিতরণের তালিকায় হালিমা বেগমের নাম থাকলেও কেউ মাংস নিতে আসেনি।
তবে এ ব্যাপারে ধুনট থানার অফিসার (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। এব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ভিডিও সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন-