ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় পরোকীয়া প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরনের পর নারীর সঙ্গে ব্যবসায়ীর নগ্ন ছবি তুলে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপন চেয়ে রাতভর নির্যাতন করেছে মাদক ব্যবসায়ী ও অপহরনকারী চক্রের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বিকালে ধুনট উপজেলার মাঠপাড়া গ্রামের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফ আলীর বাড়ি থেকে নির্যাতিত ব্যবসায়ী এবং ওই নারীকে উদ্ধার করেছে ধুনট থানা পুলিশ।
ওই ব্যবসায়ীর নাম আব্দুল মতিন (৪২)। তিনি রংপুর জেলার গঙ্গরচড়া থানাধীন ঘাগরটারী গ্রামের মিনহাজ¦ উদ্দিনের ছেলে। আর ওই নারীর নাম লাকি খাতুন (২৫)। তার বাড়িও একই জেলার পিরগঞ্জ এলাকায়।
জানাগেছে, ধুনট উপজেলার মাঠপাড়া গ্রামের সবুর সরকারের ছেলে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফ আলীর স্ত্রী সাবিনা খাতুনের সঙ্গে ঢাকার একটি গার্মেন্টেসে চাকুরি করার সুবাদে পরিচয় হয় লাকি খাতুনের। সেই সুবাদে সাবিনা খাতুনের স্বামী ইউসুফ আলীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে লাকি খাতুনের।
স্বামী পরিত্যাক্ত গার্মেন্টস কর্মী লাকি খাতুনের পরিবার বলতে আড়াই বছরের এক শিশু সন্তান ও তার মা রয়েছে।
গার্মেন্টেসে চাকুরি করার সুবাদে পাশ^বর্তী হোটেল ব্যবসায়ী দুই সন্তানের জনক আব্দুল মতিনের সঙ্গে গত কয়েক মাস আগে পরোকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে লাকি খাতুন।
গত ১২ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে লাকি খাতুন ব্যবসায়ী আব্দুল মতিনকে স্বামী বানিয়ে তার ফুফুকে দেখার অজুহাতে ধুনটের মাঠপাড়া গ্রামের চিহ্নিত সাজাপ্রাপ্ত পলাতক মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফ আলীর বাড়িতে উঠেন। কিন্তু ওই বাড়িতে ওঠার পরপরই ব্যবসায়ী আব্দুল মতিনকে জিম্মি করে ইউসুফ আলী ও তার লোকজন।
একপর্যায়ে পরিকল্পনা অনুযায়ি তারা ব্যবসায়ী আব্দুল মতিনের সঙ্গে অপহরকারী চক্রের সদস্য ওই নারীর সঙ্গে নগ্ন ছবি ও ভিভিও ধারন করেন। এরপর ইউসুফ আলী ব্যবসায়ী আব্দুল মতিনের পরিবারের কাছে মোবাইলফোনে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। কিন্তু এত টাকা দিতে অস্বীকার করায় ব্যবসায়ী আব্দুল মতিনকে রাতভর পিটিয়ে নির্যাতন করে ইউসুফ আলী ও তার লোকজন।
একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে স্থানীয় এলাকাবাসী এই বিষয়টি টের পেয়ে তারা ধুনট থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ নির্যাতিত ওই ব্যবসায়ী এবং ওই নারীকে উদ্ধার করে ধুনট থানায় নিয়ে আসলেও অপহরনকারী মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান।
এবিষয়ে ধুনট থানায় কথা হয় ব্যবসায়ী আব্দুল মতিনের সঙ্গে। তিনি জানান, পরোকীয়া প্রেমের ফাঁদে ফেলে লাকি খাতুন তাকে স্বামী সাজিয়ে তার ফুফুকে দেখতে ধুনটে নিয়ে আসেন। এরপর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার রাত ১২টার দিকে মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী তাদেরকে রিসিভ করে তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
এরপর পরিত্যাক্ত একটি বাড়িতে ইউসুফ আলী ও লাকি খাতুন সহ তাদের লোকজন আব্দুল মতিনকে রাতভর নির্যাতন চালায়। রড দিয়ে পেটানোর কারনে তার দুই পা প্রায় থেতলেই গেছে বলে জানান তিনি।
আরো পড়ুন- ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন
এবিষয়ে লাকি খাতুন জানান, ইউসুফ আলীর স্ত্রী সাবিনার সঙ্গে চাকুরি করার সুবাদে তার পরিচয় হয়। তবে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন তাকে বিয়ে করার জন্য ধুনটে নিয়ে এসেছেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ধুনট উপজেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে ধুনট থানাসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় ১৫টির মতো মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি মামলায় আদালত তাকে সাজা প্রদান করেছেন। কিন্তু এরপরও পলাতক থেকে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ইউসুফ আলী।
গত কয়েক বছর আগে রাস্তায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনার দায়ে গ্রেপ্তার ননা হলেও ঘটনাটি সেই সময় সারাদেশেই আলোচিত হয়। এরপর থেকেই পলাতক ছিল শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফ ও তার সহযোগিরা।
এবিষয়ে ধুনট থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আসাদুজ্জামান জানান, ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে ধুনট থানাসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় ১৫ টির মতো মামলা রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি মামলায় সাজা হয়েছে।
এবিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসীর সংবাদের ভিত্তিতে নারীসহ দুই জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এবিষয়ে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অনুসন্ধানবার্তা ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন-