বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিক্ষোভ, আ’লীগ অফিসে তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে সেখানেই তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।

বিক্ষোভকালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সদ্য ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি জানান। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তারা সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল-মাহিদুল ইসলাম জয়কে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। অপরদিকে নবগঠিত কমিটির পক্ষে মিষ্টি বিতরণও করা হয়।

বিক্ষোভকারীরা দুপুর ১টার দিকে মিছিল নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা হয়ে শেরপুর সড়কে যায়। এ সময় বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাসের কাঁচ ভাংচুর করা হয়। পরে তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফিরে এসে সড়কের ওপর অবস্থান নেয়।

এবিষয়ে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান জানিয়েছেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় গঠিত কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

এদিকে কাঙ্খিত পদ না পাওয়ায় এরই মধ্যে সদ্য ঘোষিত কমিটির কেউ কেউ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগ ছাড়ার কথা ঘোষণাও করেছেন। আরও অনেকেই তাদের হতাশার কথা লিখে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।

এদিকে বিলুপ্তির প্রায় ৯ মাস পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষরে সংগঠনের প্যাডে সোমবার বগুড়া জেলা কমিটি গঠন এবং অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন ওই কমিটিতে সজীব সাহা সভাপতি এবং আল-মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। ঘোষিত ৩০ সদস্যের ওই কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ১৭জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৫ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে নতুন ওই কমিটির তালিকা রাত সাড়ে ৮টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে তারা সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের সাতমাথার দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে।

এক পর্যায়ে তারা বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনসমূহের কার্যালয়ের প্রবেশ পথের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর তারা তালাবদ্ধ দলীয় কার্যালয়ের সামনে টায়ার আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর তারা শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ পেতে আগ্রহী মুকুল ইসলাম নামে একজন ওই রাতেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগ ছাড়ার ঘোষণা দেন।

নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ দেওয়া হলেও সংগঠন ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শ্রম দেওয়ার পরেও যখন আমার পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করা হলো না, তখন মনে হয়েছে এখানে না থাকাই ভাল।’

গত ২১ জানুয়ারি বগুড়ায় মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর নতুন কমিটি গঠনের জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে গত ২ ফেব্রুয়ারি জীবন-বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়। ওই সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য অন্তত ৫০জন তাদের জীবন-বৃত্তান্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দিয়েছিলেন।

তাদের মধ্যে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের অনুসারী কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাও ছিলেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বগুড়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দাবিদার অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছেন। তাদেরকে বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে এমন কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার সঙ্গে বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কোন সম্পর্ক নেই।

তবে নতুন কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া সজীব সাহা বলেন, ‘সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চাই। এই কমিটি ঘোষনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটি। তারা যাছাই বাছাই করেই এই কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে এবিষয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, ‘আমাদের নেত্রী সবকিছু যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিয়েছেন। এখানে আমাদের কারও কিছু করার নেই। যারা প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ-পদবি পায়নি, তাদের মন খারাপ হতেই পারে।