নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সংশোধিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে ইতিমধ্যেই এই কমিটির অনেক নেত্রীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে।
এতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ডরোথী রহমান মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা এমপির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, কাউন্সিলর তালিকা না টানিয়ে গত ২০২১ সালের ২ অক্টোবর বগুড়া জেলা মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডরোথী রহমান ও তার অনুসারিদের কাউন্সিলর করা হয়নি।
জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ডালিয়া খাতুন রিক্তা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হলেও তাকে অপমান করে সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া হয়। সভাপতি পদে চারজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ছয়জন প্রার্থী হলেও দ্বিতীয় অধিবেশনে সাংগঠনিক নিময়নীতি উপেক্ষা করে সাজানো ভোটার তৈরির মাধ্যমে হেফাজত আরা মিরাকে সভাপতি ও সাবিয়া সাবরিন পিংকীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ৯১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন করেন।
এদিকে কমিটি ঘোষণার পরপরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। সভাপতি হেফাজত আরা মিরা বিএনপি ঘরোনার। তাই আপন ভাই এনামুল হক সুমন বগুড়া শহর বিএনপির ১২ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি। তিনি বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে পৌর কাউন্সিলর হন।
এছাড়া অভিযোগ উঠে মহিলা লীগ নেত্রী মিরা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে তার ভাই বিএনপি নেতাকে কাউন্সিলর হতে সহযোগিতা করেন।
সাধারণ সম্পাদক সাবিয়া সাবরিন পিংকী সরকারের নাম কোন কমিটিতে ছিলনা। মহিলা লীগের দুটি কমিটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর একটিতে ৫৮ নম্বর সদস্য মাহফুজার নাম ও অপরটিতে ৬০ নম্বর সদস্য নাজমার নাম কেটে সেখানে সাবিয়া সাবরিন পিংকির নাম বসানো হয়।
রাজনীতিতে অবদান না থাকলেও পিংকী জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় সকলে হতবাক হন। কোষাধ্যক্ষ আকিলা শরিফা সুলতানা নিজের মায়ের শত কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় স্বামীসহ কারাভোগ করেন।
তাছাড়া নির্বাহী সদস্য শিল্পী বেগম ইয়াবা বিক্রিকালে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন জেলহাজতে ছিলেন। নিয়োগবিধি উপেক্ষা করে বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সুবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকাকে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে।
এছাড়া কয়েকজন যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদের নেতাদের বিরুদ্ধে অনৈতিকসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এর প্রতিবাদ করায় সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডরোথী রহমান (বর্তমানে এমপি) ও সহ-সভাপতি স্বপ্না চৌধুরীকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়।
এ নিয়ে ডরোথী রহমান আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন। সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ খাদিজা খাতুন শেফালীসহ অনেক ত্যাগী নেত্রীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেরাত ইসলাম মুন্নীকে সদস্য করা হয়।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল সকল নেতার সুপারিশ অমান্য করে কমিটির অনুমোদন দেওয়ায় গত ১৫ মাসে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে দলীয় কোন কর্মকান্ডে ডাকা হয়নি।
সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বগুড়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সংশোধিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন।
এই কমিটিতে সংসদ সদস্য ডরোথী রহমান, সাবেক এমপি অধ্যক্ষ খাদিজা খাতুন শেফালী, বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ডালিয়া খাতুনকে সদস্য করা হয়েছে।
আরো পড়ুন- বগুড়ায় ছুরিকাঘাতে আহত সেই মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু
এছাড়া সাবেক সহ-সভাপতি স্বপ্না চৌধুরীকে সহ-সভাপতি ও সাবেরাত ইসলাম মুন্নীকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। কমিটির তালিকা বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেওয়া হলেও মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেটা নেননি। তারা এ সংশোধিত কমিটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট আখ্যায়িত করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু শনিবার রাতে পত্রিকা কার্যালয়গুলোতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বগুড়া জেলা মহিলা লীগের সংশোধিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। তারা সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করার আহবান জানান।
তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা মহিলা লীগের সভাপতি হেফাজত আরা মিরা ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন কেটে দেন।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য ডরোথী রহমান এমপি জানান, জেলা মহিলী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিংকী হাইব্রিড। অর্থের বিনিময়ে অন্য দু’জনের নাম কেটে তালিকায় তার নাম বসানো হয়েছে।