ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনটে ডাক্তারের ভুল অপারেশনে কাকলী রানী (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে ধুনট হাসপাতাল সড়কের হযরত শাহ্ পরান (রহঃ) জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কাকলী রানী ধুনট পৌর এলাকার চরধুনট গ্রামের কাতার প্রবাসী কাজল হওয়ালদারের একমাত্র মেয়ে।
নিহতের পরিবারসূত্রে জানাগেছে, কাকলী রানী দীর্ঘদিন ধরে গলায় টিউমার জনিত রোগে ভুগছিল। একারনে প্রতিবেশি এক নারীর মাধ্যমে শিশু কাকলী রানীকে ধুনট হাসপাতাল সড়কের হযরত শাহ্ পরান (রহঃ) জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের খন্ডকালীন ডাক্তার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মাহফুজুল হক মামুনের কাছে চিকিৎসা নিয়ে আসছিল।
কাকলী রানীর দাদা ধীরেন্দ্রনাথ হাওয়ালদার জানান, তার নাতনীর গলায় অপারেশন করতে হবে জানিয়ে ১০ হাজার নিয়ে ডাঃ মাহফুজুল হক শাহ্ পরান (রহঃ) জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি করে। বুধবার রাত ৮টার দিকে তারা তার নাতনীকে অপরেশন রুমে নিয়ে গেলেও রাত ২টার দিকে ডাঃ মাহফুজুল হক বেরিয়ে এসে বলেন তার নাতনীর জ্ঞান ফিরছে না, তাকে বগুড়ায় নিয়ে যেতে হবে। তারপর আমরা এ্যাম্বুলেন্সে করে এবং ডাক্তার তার নিজের গাড়িতে করে বগুড়ার উদ্দ্যেশে রওনা দেই।
কিন্তু বগুড়া শহরে প্রবেশের পরই ডাক্তার অন্য রাস্তা দিয়ে চলে গেলেও আমরা হাসপাতালে পৌঁছে গিয়ে জানতে পারি সে অপারেশন থিয়েটারের ভিতরই মারা গেছে। তার গলা কাটা হয়েছে, মুখে ও গোপনাঙ্গের ভিতরে প্লাষ্টিকের পাইপ ঢুকানো রয়েছে।
ধীরেন্দ্রনাথ হাওয়ালদার বলেন, পরে ঐ অবস্থাতেই আমরা বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে শাহ্ পরান (রহঃ) জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ভিতরে গিয়ে মৃত্যুর কারন জানতে চাইলে দারোয়ান আমাদেরকে ধাক্কা দিয়ে বের করে গেট লাগিয়ে দেয়। পরে কয়েক ঘন্টা নাতনীর লাশ নিয়ে হসপিটালের সামনেই বসে থেকে নিরুপায় হয়ে বাড়িতে ফিরে আসি।
তিনি আরো জানান, ওই হসপিটালে কোন অপারেশনের ব্যবস্থা না থাকলেও তারা আমার নাতনীকে টাকার লোভে ভুল অপারেশনে হত্যা করেছে। তাই এঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি করেন তিনি।
এবিষয়ে ডাঃ মাহফুজুল হক মামুনের মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এবিষয়ে ধুনট শাহ্ পরান (রহঃ) জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ মন্ডল বলেন, অপারেশনের পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে বগুড়ায় পাঠানো হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার পরও কেন সেখানে অপারেশনের ঝূঁকি নিয়েছেন তারা, এবিষয়টি এড়িয়ে যান।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ধুনট সরকারি হাসপাতালের সামনেই গড়ে ওঠা শাহ্ পরান (রহঃ) জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিকানায় রয়েছেন ২৫ জন ব্যক্তি। পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরিক্ষাও করা হয় সেখানে।
গত ১০/১৫ দিন পর পর একদিনের জন্য বাহির থেকে খন্ডকালীন ডাক্তার নিয়ে এসে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। তবে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফরের কোন নজরদারি না থাকায় ধুনট সরকারি হাসপাতালের সামনেই গড়ে ওঠা এসব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর চিকিৎসা সেবা এখন ব্যবসায় পরিনত হয়েছে।
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা টিএসও ডাঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, শিশু মৃত্যুর বিষয়টি মৌখিক শুনেছি। এবিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।