জিয়া শাহীন:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ঘরে ঘরে এখন অ্যাডিনো ভাইরাস ঢুকে পড়েছে। প্রতিদিনই নুতন নুতন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করতে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়া এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা ওই ভাইরাস বহন করে আনলেও স্থল বন্দরে পরীক্ষার জন্য কোন দেশেই নেই স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে বাংলাদেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করেছেন অনেকেই।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে কেউ না কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। এই ভাইরাসের কোন ঔষধ না থাকায় প্যারাসিটামলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে হাঁচি, কাশি লেগেই আছে। আক্রান্ত রোগীর খাবারের প্রতি অনিহা এবং কোন খাবারই স্বাদ লাগেনা, বিরক্তিবোধ মনে হয় বলে জানিয়েছেন অনেকেই। কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অন্তত ১০ দিন পর্যন্ত ভুগতে হচ্ছে।
দেখা গেছে, প্রতিদিনই শত শত মানুষ ভারত ও বাংলাদেশের হিলি স্থল বন্দর দিয়ে যাতায়াত করছে। এদের অনেকেই এই ভাইরাস শরীরে বহন করে আনছে। অথচ, দুই দেশের স্থল বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোন ব্যবস্থাই নেই। যাতায়াতকারীরা কেউ মাক্সও ব্যবহার করছেনা।
পশ্চিমবঙ্গের বালুর ঘাটের কন্ট্রোল প্রোগ্রামের কর্মী মিঠু সাহা ঘোষের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, গত ৮ মার্চ আমাদের ব্লকে সেমিনার হয়েছে। সেখানে ডেঙ্গু ছাড়াও অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে। সেমিনারে সতর্ক করে বলা হয়েছে করোনা ভাইরাসের মত না হলেও করোনার মতই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাক্সপড়া, হাত ধোয়া, বাইরে থেকে ঘড়ে ঢুকে কাপড় ছেড়ে বাচ্চাদের সামনে যাওয়া এমনটি বলেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের বালুর ঘাটের সুভেন্দু দাস জানান, ৪ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। এখনও বাচ্চা পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ছোটদের এন্টিবায়োটিকও দেয়া যায় না। এই অ্যাডিনো ভাইরাস এখন প্রায় প্রতিটি ঘরেই।
বাংলাদেশ থেকে ভারতের সিকিমে ঘুরতে যাওয়া বগুড়ার মহসীন আলম জানান, সিকিমে যাওয়ার পরই নিজের এবং তার সাথে যাওয়া আরও দুই জন ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তারা দেশে ফিরে আসছে। জ্বর শর্দি, কাশি হচ্ছে। কিছুই খেতে ইচ্ছে করেনা এবং খাবারের কোন স্বাদও পাওয়া যায়না।
বাংলাদেশের হিলি ইমিগ্রেশনের ওসি আশরাফুল আলম জানান, ভারতে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক দৃষ্টিও রেখেছি। হিলি হাকিমপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাথে কথাও বলেছি। ইমিগ্রেশনে অন্তত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাটা জরুরি। প্রথম দিকেই সতর্ক হতে হবে। তা না হলে করোনার মত অবস্থা হবে। অবশ্যই মাক্স নিয়ে ভারতে যেতে হবে এবং যারা আসবেন তাদেরও মাক্স পড়েই আসতে হবে।
বগুড়ার বে-সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল টিএমএসএসের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাঃ জাকির হোসেন জানান, আসলে এই ভাইরাস করোনার মত অতটা ভয়ংকর নয়। তবে এই ভাইরাস এট্যাক করলে তাকে ভুগতে হবে। তাই সাবধনতা অবলম্বন করা উচিত। আমাদের দেশে এখনও এটা নেই। এটা দেখার জন্য ঢাকায় একটি সেল আছে। তারাই সঠিক ভাবে বলতে পারবে বাংলাদেশে আছে কি নাই। তবে অন্য দেশ থেকে কেউ শরীরে বহন করে আনতেই পারে।