আব্দুর রহিম রানা, যশোর প্রতিনিধি: অনুসন্ধানবার্তা
ঈদের ছুটি শেষে খুলতে শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েকদিন পরই শুরু হবে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়লেও এখনো বই নিয়ে কাটেনি দ্বিধা। বিভিন্ন বইয়ে একাধিক সংশোধনী দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
তবে এপ্রিলের শেষে এসেও মেলেনি এই সংশোধনী। শিক্ষকরাও পড়াতে গিয়ে জটিলতায় পড়ছেন। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা ভুল তথ্য আছে ভেবে পড়তে চাইছে না। শিক্ষার্থীরা বলছে, বইয়ে ভুল সংশোধনের পরই পড়বে তারা। বিশেষ করে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও খারাপ। তারা রীতিমতো উদ্দেশ্যহীনভাবে অধ্যয়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
যশোর শহরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের যখন আমরা পড়াতে যাই তখন তারা প্রশ্ন করে বসে স্যার এগুলো তথ্য ঠিক আছে তো। এগুলো পরিবর্তন হবে নাতো। তিনি বলেন, এখন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্লাসে যেতে রীতিমতো অস্বস্তি লাগছে। কি পড়াবো কীভাবে পড়াবো সেটার স্পষ্ট ধারণা নেই আমাদের কাছে।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, আমরা যখন পড়াতে যাই শিক্ষার্থীরা বলে স্যার এগুলো পড়ে কি লাভ। আগে ভুল ঠিক করে দেন। শিক্ষার্থীরা এগুলো বলার পর আমি রাগান্বিত হই। কিন্তু রাগ দেখালেও লাভ হয় না। জোর গলায় বলার মতো কোনো যুক্তি থাকে না।
তিনি বলেন, ৩০শে এপ্রিল স্কুল খুলবে তারপরই জানা যাবে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হবে কিনা। আমরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি নিয়ে পড়েছি আরও বিপাকে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আমরা ট্রেনিং করেছি মাত্র ৫ দিন। এই ট্রেনিং মোটেও কাজে দেয়নি। আবার যারা ট্রেনিং করেননি তাদের ট্রেনিং করিয়েছি আমরা। বিষয়টা এমন আমরা নিজেরাই সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি। আবার আমরাই ট্রেনিং করিয়েছি অন্যদের। আমাদের নিয়মিতভাবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে হচ্ছে। নিয়মিত এই মূল্যায়ন আপ করতে হচ্ছে অনলাইনে। এর মাধ্যমে অটোমেটিক পদ্ধতিতে ফল চলে আসবে। নতুন এই শিক্ষাক্রম নিঃসন্দেহে ভালো। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, নেতৃত্ব গুণ, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিভা সবই ফুটে উঠছে।
হৃদয় হাসান নামে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলে যাওয়া লাগে তাই যাই। স্কুলে স্যাররা বই বের করেন কিন্তু আমাদের বই আনতে না করেন। স্যার বিভিন্ন বিষয় বোর্ডে লিখে দেন। সেগুলো আমরা খাতায় উঠিয়ে নেই। ক্লাসেই কখনো গ্রুপ কিংবা কখনো এককভাবে এর উত্তর দিতে হয়। তবে আগের থেকে এখন একটু মজা লাগছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে তো অনেক পড়তে হয়েছে আমাদের। তবে এখন কম পড়তে হচ্ছে। পরীক্ষার প্যারা নাই। তবে বই নিয়ে সন্দেহ থাকায় ভালো লাগছে না।
রবিউল ইসলাম নামে একজন অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বইয়ের এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে কোনো লেখাপড়া করছেনা। কোন বইয়ে কি পড়বে সেটাই বুঝতে পারছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঠ্য বইয়ে ভুলের কারণে ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’। পাঠ্য বইয়ে ভুল বের করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা হয়েছিল তদন্ত কমিটি। এই কমিটির রিপোর্টে উঠে আসে বইয়ের যাচ্ছে তাই অবস্থা। তারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৪ বইয়ে ৫৮টি অসঙ্গতিসহ ১৮৮টি ভুল বের করে। এই বইয়ের সংশোধনী এখনো পৌঁছাইনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।
জানা যায়, এই সংশোধনী দেয়া হবে তিনভাবে। প্রথমত, শিক্ষকরা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সামনে ভুল দেখিয়ে দেবেন তা শিক্ষার্থীরা সংশোধন করবে। দ্বিতীয়ত, ভুল থাকা অংশটুকু ছোট কাগজে ছাপিয়ে বইয়ে ভুল অংশে লাগিয়ে দেয়া হবে। আর তৃতীয়ত, পুরো বই, নির্দিষ্ট অধ্যায় ছাপিয়ে দেয়া হবে শিক্ষার্থীদের হাতে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, বইয়ে মৌখিকভাবে যে সংশোধনী শিক্ষকরা দেবেন তা বুধবার (২৬ এপ্রিল) পাঠানো হয়েছে মাউশিতে। এগুলো শনিবার কিংবা রোববার পাঠানো হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
এনসিটিবি প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার ঢালী বলেন, বইগুলোর অল্প কিছু সংশোধনী দেয়া হয়েছে। এগুলো আমাদের ওয়েবসাইটে আছে, এগুলো আমরা মাউশিতেও দিচ্ছি। এই সংশোধনী কপি প্রধান শিক্ষকদের কাছে যাবে। এই কপি প্রধান শিক্ষক শ্রেণি শিক্ষকদের হাতে দেবেন। ব্যাপক আকারে যেখানে সংশোধনী হবে তা নতুন বইতে ইনসার্ট করা হবে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, পাঠ্য বইয়ের সংশোধনী বুধবার (২৬ এপ্রিল) আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি মাউশিতে। এই সংশোধনী বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলে স্কুলে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বছরের বইয়ের সংশোধনীর কাজ চলছে। এই কাজও শীঘ্রই শেষ হবে।