বগুড়া প্রধান ডাকঘরে ডাকাতিসহ হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে ডাকাতিসহ অফিস সহায়ক প্রশান্ত হত্যাকাণ্ডের মামলার একমাত্র প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এরআগে বুধবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে নওগাঁর সাপাহারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত শফিকুল ইসলাম সাপাহারের পশ্চিম করমডাঙ্গা এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। এসময় তার কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল এবং ডাকাতির সময় পরিহিত শার্ট, প্যান্ট, জুতা ও ব্রেসলেট উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ ৯টি মামলা রয়েছে।

জানাগেছে, গত ২৪ এপ্রিল মধ্যরাতে নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালনকালে খুন হন অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য্য। নিহত প্রশান্ত শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া হিন্দুপাড়া এলাকার প্রাণকৃষ্ণ আচার্য্যের ছেলে।

প্রেস কনফারেন্সে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, গত ১২ মার্চ মোটরসাইকেলযোগে নওগাঁ থেকে বগুড়ায় আসে শফিকুল ইসলাম। আসার পর তিনি মোটরসাইকেল বগুড়া জেলা ডাকঘরে পার্কিং করতে যায়। লোকজন পোস্ট অফিস থেকে টাকা তুলে বের হচ্ছে এমন দৃশ্য দেখে সে পোস্ট অফিসের ভল্ট ভেঙ্গে টাকা লুন্ঠন করার পরিকল্পনা করে। তিনি তখন পোস্ট অফিসের ভিতরে যায় এবং ভোল্ট রুম, সিসি ক্যামেরার অবস্থানসহ বিভিন্ন স্থান পর্যবেক্ষণ করেন।

পরে ১৫ মার্চ আবারো বগুড়ায় এসে শফিকুল ইসলাম নিউমার্কেট থেকে হ্যান্ড গ্লোভস, ট্রাউজার, গেঞ্জি এবং থানার পিছনের বাবু মেশিনারিজ থেকে গ্রিল/ভোল্ট কাটার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং এসএস পাইপের একটি খণ্ড কেনেন। পরে টাকা কম পড়ে যাওয়ায় ওইদিন তিনমাথায় ইসলামি ব্যাংকের বুথ থেকে ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন এবং ডাকাতির জন্য কেনা মালামাল নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শফিকুল ২০ এপ্রিল আবারো বগুড়ায় আসে। সারারাত ঘুরে ওইদিন মধ্যরাতে পোস্ট অফিসের ওয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে এক কোনায় অপেক্ষা করতে থাকে। পরেরদিন সকালে পোস্ট অফিসের গার্ড বাথরুমে গেলে শফিকুল তার যন্ত্রপাতির ব্যাগ নিয়ে ভিতরে ঢোকে এবং সিঁড়ি ঘরে লুকিয়ে থাকে। এরপর দুপুর সোয়া একটার দিকে গার্ড হাতমুখ ধুতে গেলে ভোল্ট রুমের দিকে যায় এবং জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ভোল্ট রুমে প্রবেশ করে। ভোল্ট রুমে প্রবেশ করে ভোল্ট রুমের সিসি টিভি ক্যামেরার লাইন কেটে দেয় এবং ভোল্ট কাটে কিন্তু টাকার বাক্স দুরে থাকায় টাকা নিতে পারে না। পরে সবকিছু ওইখানে রেখে সন্ধ্যার দিকে মূলগেট টপকে বাইরে বের হয়ে তার নওগাঁর ভাড়া বাসায় চলে যায়।

একদিন নওগাঁর ভাড়া বাসায় অবস্থান করে রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। পরের দিন ঈদের নামাজ পড়ে বাড়িতেই অবস্থান করে। ঈদের পরের দিন বিকালে তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে নওগাঁর ভাড়া বাসায় আসে সেখানে মোটরসাইকেল গ্যারেজে রেখে বাস যোগে ৯টার দিকে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে এসে চারমাথায় নামে। চারমাথা থেকে সিএনজি নিয়ে সাতমাথা আসে। সাতমাথা নেমে মধ্যরাত পর্যন্ত পোস্ট অফিসের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে। রাত দুইটার দিকে শফিকুল চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে ওয়াল টপকে পোষ্ট অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু কেঁচিগেট লাগানো থাকায় পোস্ট অফিসের বারান্দার গ্রিলের দুইটা পাতি রেঞ্জ দিয়ে ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে।

সেখানে কর্তব্যরত গার্ড জেগে থাকায় শফিকুল কার্টুন ও বস্তার আড়ালে ঘন্টাখানিক অপেক্ষা করে। এক সময় সতর্কতার সাথে সিসি টিভি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে সোজা ভোল্ট রুমে চলে যায়। ভোল্ট রুমের টাকার বাক্স কাছে নিয়ে আসার কিছু না থাকায় সে অন্য ২/৩ টা রুমের তালা কেটে ভেতর থেকে একটি লম্বা রড নিয়ে আসে। রুমের তালা কাটার শব্দে কর্তব্যরত গার্ড প্রশান্ত জেগে যায় এবং প্রশান্তের সাথে তার ধস্তাধস্তি হয়। তার কাছে থাকা এসএস পাইপ দিয়ে প্রশান্তের মাথায় আঘাত করে ও গলা চেপে ধরে থাকে এতে ঘটনাস্থলেই প্রশান্ত মারা যান। শফিকুল পুনরায় ভোল্ট রুমে গিয়ে ওই রড দিয়ে ভল্ট রুমে থাকা র‌্যাকটি কাছে নিয়ে এসে র‌্যাকে থাকা আট লাখ তার কাছে থাকা ব্যাগে তুলে নেয়। পরে সকাল সাতটার দিকে শফিকুল নিহত গার্ডের পকেটে থাকা কেঁচিগেটের চাবি বের করে নিয়ে ভিতরের গেট এবং মূল গেটের তালা খুলে বাইরে বের হয়ে বাইরে থেকে মূল গেট তালা দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তিনি সাতমাথা জিরো পয়েন্ট থেকে অটোরিক্সা ধরে চারমাথা যায়। পরে চারমাথা হতে বাস যোগে নওগাঁ চলে যায়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, নওগাঁ গিয়ে নওগাঁ সদরে অবস্থিত জলিল মার্কেটের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে তার একাউন্টে দুই লাখ এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে তার একাউন্টে তিন লাখ ৭৬ হাজার টাকা জমা রেখে নওগাঁর ভাড়া বাসায় যায়। পরে সেখানকার গ্যারেজ থেকে তার মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ি সাপাহারে চলে যায়।

পুলিশ সুপার সুদীপ বলেন, গ্রেপ্তার আসামি একজন পেশাদার চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী। তিনি এর আগে ২০১৯ সালে ডিএমপি বনানী থানা এলাকায় জনতা ব্যাংকের ভল্ট কেটে টাকা লুন্ঠন করার সময় ধরা পড়েছিল। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় দোকানঘরে চুরি, বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি, ছিনতাইসহ পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতেও ডাকাতি ও ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে জেল খেটেছে বলে স্বীকার করেছে।

তিনি আর বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতে পাঠানো হবে। আর এর ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা আরও তদন্ত করা হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) স্নিগ্ধা আখতার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ট্রাফিক) হেলেনা আকতার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম, সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী, ডিবির ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ, শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।