বগুড়ায় মাটি খুঁড়ে দুই মাস পর লাশ উদ্ধার, গ্রেফতার ৩

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ায় মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই বিধান চন্দ্রকে (২০) অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই মাস পর হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পর নিহতের মৃতদেহ ও আলামতও উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, গত ১১ এপ্রিল বগুড়ার কাহালু উপজেলার অনীল চন্দ্র সরকারের ছেলে বিধান চন্দ্র (২০) নিখোঁজ হয়ে যায়। এঘটনায় অনীল চন্দ্র সরকার পরদিন ১২ এপ্রিল কাহালু থানায় একটি ডিডি (৬১১) দায়ের করেন। পরবর্তীতে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে নিখোঁজের দেড় মাস পর অনীল চন্দ্র সরকারকে অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি অপরিচিত ফোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে জানায় তার ছেলে বিধান তাদের হেফাজতে আছে। তার ছেলেকে ফেরত পেতে চাইলে ছয় লক্ষ টাকা মুক্তিপন দিতে হবে।

এঘটনাটি অনীল চন্দ্র সরকার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে পুলিশের কয়েকটি দল তদন্ত শুরু করে আসামীদের গ্রেফতার অঅভিযান চালাতে থাকে। একপর্যায়ে শুক্রবার (২৩ জুন) ভোর রাতে কাহালু থানা ও সদর থানা এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীসহ বিপুল চন্দ্র প্রাং (৩৫), দিনেশ চন্দ্র প্রাং (৪১) ও উৎপল চন্দ্র (২৪) করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বাটন মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড সহ (যা দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল) জব্দ করা হয়েছে।

বগুড়া ডিবির ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামীরা ও নিহত বিধান পূর্ব পরিচিত ছিল। আসামীরা বিধানের বাবা অনীল চন্দ্রের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার জন্য তাকে আটক করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১১ তারিখ সন্ধ্যার পরে এপ্রিল আসামীরা বিধানকে কৌশলে কাহালু থানাধীন শিবাকলমা গ্রামের পূর্বে সীমান্তবর্তী ভাদাখাল নামক একটি জন মানবশূন্য এলাকায় নিয়ে যায়।

তিনি আরো জানান, আসামীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একত্রে মদ্য পান করে। এতে বিধান নেশাগ্রস্থ হলে পূর্ব পরিকল্পনা মতে গ্রেফতারকৃত আসামী বিপুল ও উৎপল ভিকটিমের সাথে কথা বলতে থাকে এবং গ্রেফতারকৃত অপর আসামী দিনেশ পেছন থেকে বিধানের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে বিধান মাটিতে পড়ে গেলে, আসামী উৎপল ভিকটিমকে তার কাছে থাকা হাতুড়ি দিয়ে আবারো তাকে আঘাত করে। তাদের পরিকল্পনা ছিলো বিধানকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলা, কিন্তু আঘাত গুরুত্বর হওয়ার কারণে বিধানকে তারা তাৎক্ষনিক হত্যার সিন্ধান্ত নেয়। পরে তাকে পানিতে মাথা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামীরা। এরপর তারা লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে পাশেই মাটি খুড়ে পুতে রাখে। তাড়াহুড়ার কারণে আসামীরা কাজটি ঠিকমত করতে পারেনি। পরদিন ভোরবেলা আসামী বিপুল কি অবস্থা জানার জন্য লাশ পুতে রাখার স্থানে গেলে দেখতে পায় যে, শেয়ালে মাটি খুড়ে লাশের একটি হাত বের করে ফেলেছে। তাৎক্ষনিক আসামী বিপুল মাটি চাপা দেয় এবং বিপুল ৪/৫ দিন যাবৎ বিষয়টি নজরদারী করে এবং আসামী দিনেশ ও উৎপলের সাথে আলোচনা করে অন্যস্থানে আরো ভালভাবে পুতে রাখার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে আসামীরা ৪/৫ দিন পর লাশটি সরিয়ে প্রায় ৫০ গজ দূরে জমি সেচের ড্রেনের নিচে গভীর করে পুতে ফেলে।