স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা:
সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার যমুনা নদীতে আবারো ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যমুনা নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধি ও যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলনের কারনে এই ভাঙ্গন আরো তীব্র আকার ধারন করছে। গত ২৪ ঘন্টায় আবারো কাজিপুরের স্পার ও বাঁধের ১৫০ মিটার অংশ যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে এ বাঁধটি পুরোপুরি ধসে গেলে কাজিপুর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, যমুনা নদী থেকে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন করে তা নদীর তীরে স্তূপ করে রেখে বালু ব্যবসা পরিচালনা করায় এই ধস দেখা দিয়েছে। বুধরবার (১২ জুলাই) ভোর রাতে কাজিপুর উপজেলার মেঘাই ১নং স্পারের উজানে এ ধস দেখা দেয়।
পরে সংবাদ পেয়ে ধস ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোর থেকেই জিওব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছে। তবে এর আগেও গত ৭ জুলাই কাজিপুর মেঘাই স্পার ও বাঁধের ৩০ মিটার এলাকা যমুনা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার ভোর রাতে হঠাৎ করেই ধসে যেতে থাকে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ। এসময় বাঁধের পাশে নোঙর করে রাখা জেলেদের ৩০ নৌকা মাটিচাপা পড়ে। অপরদিকে বালু ব্যবসায়ীদের স্তূপ করে রাখা বালুর একটি বড় অংশও নদীগর্ভে চলে যায়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কাজিপুর থানা, খাদ্য গুদাম, মডেল মসজিদ, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, কয়েকজন অসাধু বালু ব্যবসায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ম না মেনে যমুনা নদী থেকে যত্রতন্ত্রভাবে বালু উত্তোলন এবং নদী তীরের ১০ ফুটের মধ্যেই সেই বালু স্তূপ করে রেখে ব্যবসা করার কারণেই এ ধস দেখা দিয়েছে।
গত ২০ জুন ওই সব বালুর পয়েন্টগুলো অপসারণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও বালুর স্তূপ সরানো হয়নি।
এবিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো: অনিক ইসলাম জানান, বাঁধের ধসে যাওয়া অংশ পরিদর্শন করা হয়েছে। এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সকাল থেকেই জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু করা হয়েছে। তিনি জানান, ইউএনও স্যার প্রশিক্ষণে রয়েছেন। তবে বালুর স্তূপ সরানোর অভিযোগটি ইউএনও স্যার পেয়েছেন কিনা তা জানা নেই। তবে আমরা নদীর তীর থেকে বালু সরানোর জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছিলাম। এরপর সেখান থেকে তারা বালু অপসারণও শুরু করে, কিন্তু পুরোপুরি সরানোর আগেই ভাঙন দেখা দিল। ভাঙনে তাদের বালুরও একটি বড় অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে।
কাজিপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বিপ্লব জানান, গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার ফলে বুধবার ভোর রাতে স্পার এলাকায় ধস শুরু হয়েছে। রাতেই দ্রুত ওই স্পারের প্রায় ১৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ স্পারটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে কাজিপুর থানা, খাদ্য গুদাম, রেজিস্ট্রি অফিস, কাজিপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়বে।
এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, সকাল পর্যন্ত প্রায় ১৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। খবর পেয়ে সেখানে ভোর থেকেই জিওব্যাগ ডাম্পিং শুরু করা হয়েছে। এখন ভাঙন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিনি বলেন, বালু ব্যবসায়ীদের ড্রেজার মেশিনের কারণে বাঁধটি দূর্বল হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক ভাবে বাড়ছে নদীর পানি। আর এসব কারণেই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।