ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনটে ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) পদে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরীর বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে থেকে এখনও তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন গোপালনগর ইউনিয়নের কাজী আবু সাইম। সম্প্রতি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মুরাদ জাহান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওই কাজীকে ‘কেন তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে না’ মর্মে নোটিশ প্রদান করেছেন।
জানাগেছে, ২০১৬ সালের ৩ জুলাই ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের কাজী মতিউর রহমান দূর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন। এরপর পাশ^বর্তী চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের কাজী রেজাউল করিম গোপলনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হিসেবে দায়িত্ব পান। এমতাবস্থায় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ইউএনও সহ নিয়োগ কমিটির স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরী করে গোপলনগর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) পদে যোগদান করেন চকডাকাতিয়া গ্রামের আব্দুল মোত্তালেবের ছেলে আবু সাইম।
পরবর্তীতে গোপনে ভুয়া নিয়োগপত্রের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় একই পদের প্রার্থী আব্দুল আলিম নামে এক ব্যক্তি কাজী আবু সাইমের বিরুদ্ধে ধুনট ইউএনও অফিস, সাব রেজি: অফিস, ডিসি অফিস সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ব্যক্তির অভিযোগটি তদন্ত করতে ধুনট ও কাহালু উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসকে নির্দেশনা প্রদান করেন মন্ত্রণালয়।
পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ধুনট ও কাহালু উপজেলার সাব রেজিস্টার অফিসের যৌথ তদন্ত প্রতিবেদনে গোপালনগর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী আবু সাইমের নিয়োগপত্র ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মুরাদ জাহান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওই কাজীকে ‘কেন তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে না’ মর্মে নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু তারপরও নোটিশের কোন জবাব না দিয়ে বহাল তবিয়তে থেকে অবৈধভাবে আবু সাইম নিকাহ রেজিস্ট্রার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে চরখুকশিয়া গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমরাও নিয়োগ প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু আবু সাইম ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরী করে হঠাৎ করেই যোগদান করেন। পরে তার ভুয়া নিয়োগের বিষয়টি জানতে পারি। তখন আমরা তার ভুয়া নিয়োগপত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদনে নিয়োগপত্র ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় ‘লাইসেন্স কেন বাতিল হবে না’ মর্মে তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরপরও তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় বহাল তবিয়তে থেকে অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তিনি গোপনে বাল্য বিবাহও রেজিস্ট্রি করছেন।’
এবিষয়ে গোপালনগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোস্তাফিজার রহমান নয়ন বলেন, শুনেছি ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরী করে তিনি নাকি এখনও নিকাহ রেজিস্ট্রার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এবিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে এবিষয়ে গোপালনগর ইউনিয়নের কাজী পরিচয় দেয়া আবু সাইমের বক্তব্য নিতে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেন, ‘এসব ভুয়া তথ্য কোথায় পান আপনারা!’ এই বলেই ফোন কল কেটে দেন তিনি।
তবে এবিষয়ে তৎকালীন ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, ওই ইউনিয়নে কাজী নিয়োগের বিষয়ে উপজেলা কমিটি কোন রেজুলেশন করেনি। কিন্তু পরে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ নেয়ার বিষয়টি জানতে পারি। পরবর্তীতে এবিষয়ে তদন্ত শুরু হয়।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান বলেন, এই উপজেলায় নতুন যোগদান করায় বিষয়টি জানা ছিল না। তবে মন্ত্রণালয়ের নোটিশের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।