জেমস আব্দুর রহিম রানা, অনুসন্ধানবার্তা:
হাড়কাঁপানো তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ। গত কয়েক দিনের শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই আকাশ মেঘলা থাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না। পাশাপাশি হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশাও ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
শুক্রবার সকালে যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছেএ তীব্র শীতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যশোরে শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়ছে। শেষ রাতে ঘন কুয়াশা পড়ছে। বেলা বাড়লে হালকা কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও মেঘের আড়াল থেকে মাঝে মাঝে সূর্য উঁকি দিলেও তাপ ছড়াচ্ছে না। ঠান্ডার দাপটের কাছে যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে সূর্যটাও!
হঠাৎ হাড়কাঁপানো শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বেলা বাড়লেও ঘর থেকে বের হতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে বেনাপোল স্থলবন্দরে কর্মরত শত শত শ্রমিকরা পণ্য লোড আনলোডে মারাত্মক সমস্যায় পড়ছে। কনকনে শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ছে।
খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ। দৈনন্দিন কাজে বের হতে পারছেন না অনেকে। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ। শীতের তীব্রতায় এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাহিল হয়ে পড়েছে। দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকের দল যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। দিন-রাতের তাপমাত্রা কমছে ক্রমেই। সব মিলিয়ে বাঘ কাঁপানো মাঘের আগমনেরই আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া।
তীব্র শীতের কারণে কৃষকরা বোরের বীজতলা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। ঠান্ডা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে বীজতলা কোল্ড স্ট্রোকে বিনষ্টের দুশ্চিন্তা করছেন তারা। যারা আলু ও সরিষার আবাদ করেছেন তারাও ঠান্ডা ও কুয়াশায় চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
শীতের দাপটে সবচে কষ্ট পাচ্ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। জীবিকার তাগিদে হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে তাদের কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে।
রিকশাচালক আলাউদ্দীন বলেন, যশোরে খুব ঠাণ্ডা পড়ছে। দুপুর পর্যন্ত সূর্য দেখা যায়নি। ঠাণ্ডা বাতাসে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়েছে। শহরে লোকজন কম, তাই আয় কম হয়েছে। বিকেলে তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
দড়াটানা এলাকার বৃদ্ধা আয়শা বেগম বলেন, খুব ঠাণ্ডা লাগছে। এ কারণে জ্বর সর্দি কাশি শুরু হয়েছে। ঘরে শুয়ে থাকার উপায় নেই। পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছি। তিনি বলেন, দুপুর পর্যন্তও সূর্য দেখা যায়নি। এখন কি করবো, খাবো কি বুঝতে পারছি না।
পথচারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সকাল থেকেই কুয়াশায় চারপাশ ঢাকা পড়েছে। তারপরও কাজ থেমে নেই। পেটের তাগিদে বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে।
এদিকে শহরের চাইতে গ্রামের দিকে শীতের তীব্রতা তুলনামূলক বেশি। গ্রাম এলাকায় হিমেল হাওয়া ও কুয়াশাও পরিমাণ বেশি পড়ছে। সঙ্গত কারণে তাপমাত্রাও গ্রামের দিকে অনেক নিচের দিকে।
অভয়নগরের শ্রমজীবী মানুষ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, তীব্র শীতের মধ্যেও আমাদের কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে হচ্ছে। তবে ঠান্ডার কারণে ঠিকমত কাজ করতে পারছিনা।
কাগজপুকুরের ভ্যান চালক মাহাবুব বলেন, গত তিন-চারদিন যে পরিমাণ শীত পড়ছে তাতে বাইরে ভ্যান চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভ্যান না চালালে ভাত জুটবে না, তাই বাধ্য হয়ে পথে নামতে হয়েছে।
শহরের বেজপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, শীত জেঁকে বসায় মানুষজন ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। বাজারে লোকজনের আনাগোনা কমে গেছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে সেভাবে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শীত মোকাবেলায় আগুন জ্বালিয়ে অনেকে তাপ নেয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকূলেরও জবুথবু অবস্থা। প্রচন্ড শীতে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও নাকাল হয়ে পড়ছে।
যশোরের স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে যশোরে সর্বনিম্ন ১১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্বর, হাঁচি, কাশিসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অপর দিকে শীতের কারণে সারাদিনই গরম পোশাক পরে মানুষজনকে চলাচল করতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর বন্দর এলাকা অনেকটাই শূন্য হয়ে পড়ছে। শীতকালীন রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে গরম পানি পান করাসহ গরম কাপড় ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
যশোর আড়াইশ শষ্যা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রচন্ড শীতে শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীর চাপ থাকলেও হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।