স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনটে এক কিশোরীর নবজাতক শিশুকে ১ লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানাগেছে, ধুনট সদর ইউনিয়নের মাটিকোড়া গ্রামের মৃত আশাদুল ইসলামের মেয়ে আয়শা খাতুন (১৬) বেলকুচি গ্রামে তার নানা মৃত কপিল উদ্দিনের বাড়িতে নানী আছিয়া বেগমের সঙ্গে বসবাস করে আসছে। গত এক বছর আগে ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকুরির সুবাদে নওগাঁ জেলার নজিপুর এলাকার সোহেল নামে এক যুবকের সঙ্গে আয়শার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আয়শা ও সোহেল ধুনটের বেলকুচি গ্রামে বসবাস করে। এর কিছুদিন পর আয়শাকে বাড়িতে রেখে সোহেল জীবিকার তাগিদে ঢাকায় যায়। গত ২৮ নভেম্বর শেরপুর উপজেলার মাহবুব ক্লিনিকে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন আয়শা খাতুন। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখার আগেই ১ লাখ টাকায় শিশুটিকে ওই ক্লিনিক থেকেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আর মাত্র ৩০ হাজার টাকা মা আয়শার হাতে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে আয়শার প্রতিবেশি মামী তারাভানু বলেন, আয়শা খাতুনের পরিবারে তেমন কেউ নেই। সে এবং তার বৃদ্ধ নানী অন্যের বাড়ি ও জমিতে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। গত ২৮ নভেম্বর তাকে ধুনটের বাড়ি থেকে শেরপুরের মাহবুব ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে সিজার করানো হয় এবং তার একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু পরে আয়শা খালি হাতে বাড়ি ফিরে আসলে তার সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার কথা শুনতে পাই। সে সন্তানের জন্য এখনও কাঁদে। কিন্তু দরিদ্র পরিবার হওয়ায় তার পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই।
এবিষয়ে আয়শা খাতুন বলেন, প্রতিবেশি নানা শাহীন আমাকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে শেরপুরের মাহবুব ক্লিনিকে সিজার করায়। শুনেছিলাম আমার ছেলে সন্তান হয়েছে। কিন্তু দেখতে পারিনি। জ্ঞান ফেরার আগেই শাহীন নানা আমার সন্তানকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যান। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করে দিয়েছেন। তবে সন্তানকে দেখতে ইচ্ছে করে কিনা এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আয়শা খাতুন মুহুর্তেই কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, কোন মা কি তার সন্তানকে বিক্রি করতে চায়? আমিও চাইনি। আমাকে হুমকি-ধামকি দেওয়ার পর রাজি হয়েছি। আমার সন্তানকে অনেক বার দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা দেখায় নাই। আমার সন্তানের ঠিকানা শুধু শাহীন নানাই জানেন। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। তবে এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
আয়শার প্রতিবেশি নানার পুরো নাম রফিকুল ইসলাম শাহীন। তিনি ধুনট সদর ইউনিয়নের বেলকুচি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে এবং তিনি ধুনট উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে থানাসূত্রে জানাগেছে। রফিকুল ইসলাম শাহীন বর্তমানে শেরপুর উপজেলায় বসবাস করেন।
এদিকে সম্প্রতি আয়শার সন্তান বিক্রির লোমহর্ষক ঘটনার একটি ভিডিও বক্তব্য ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন বেলকুচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সমাজকর্মী ফৌজিয়া হক বিথি। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। হুমকি দেয়া হয় শিক্ষিকা ফৌজিয়া হক বিথিকে। এঘটনায় শনিবার রাতে ফৌজিয়া হক বিথি বাদী হয়ে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম শাহীনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় একটি জিডি দায়ের করে।
শিক্ষিকা ফৌজিয়া হক বিথি বলেন, দরিদ্র পরিবারের মেয়ে আয়শা খাতুন। তাকে অর্থের লোভ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে রফিকুল ইসলাম শাহীন তার সন্তানকে বিক্রি করে দেন। আয়শা তার সন্তানকে ফিরে পেতে চায়। তাই তাকে আইনী সহায়তা দেওয়ার আশ^াস দেওয়ায় রফিকুল ইসলাম শাহীন উল্টো আমার বিরুদ্ধেই থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করছে এবং আমাকে হুমকি দিয়েছে। এবিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হলে, পরে তা সাংশোধন করে আয়শার ঘটনা বাদ দিয়েই সাধারণভাবে জিডি নেয় পুলিশ। ওই সন্তানকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে এবং আইনী সহায়তা প্রদান করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সহযোগি কামনা করেন তিনি।
তবে এবিষয়ে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম শাহীনের বক্তব্য নিতে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈকত হাসান বলেন, সন্তান বিক্রির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এবিষয়ে অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।