ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলার সেই হতদরিদ্র তিন যমজ ভাই মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। দরিদ্র পরিবারে জন্মনেয়া পিতৃহারা যমজ তিন ভাইয়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মনোবলই তাদেরকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
যমজ তিন ভাইয়ের নাম শাফিউল হাসান, মাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান। তারা ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। তার মাতার নাম আরজিনা বেগম। ২০০৪ সালের ১০ জানুয়ারি সংগ্রামী নারী আরজিনা বেগম জন্ম দেন যমজ তিন পুত্রসন্তান। এর আগে তার গর্ভে জন্ম নেয় এক ছেলে আর এক মেয়ে। ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর স্বামী গোলাম মোস্তফা মৃত্যুবরণ করেন। তখন যমজ তিন সন্তান কেবল শিশুশ্রেণির শিক্ষার্থী। গৃহকর্তার অবর্তমানে পরিবারটি হারিয়ে ফেলে স্বচ্ছলতা।
কিন্তু অর্ধশিক্ষিত মা আরজিনা বেগম এক হাতে অভাবের সংসার, অন্য হাতে পাঁচ ছেলে-মেয়ের দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। পাঁচ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে স্বামীর যা কিছু সম্পদ ছিল, সব বন্ধক রাখতে হয়েছে অন্যের কাছে। তার বড় ছেলে মাহমুদ হাসান এইচএসসি পাস করে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে লেখাপড়ায় ইতি টেনেছে এবং মেয়ে মৌসুমি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে লেখা করছে।
আর ২০২০ সালে যমজ তিন ভাই ধুনট সরকারি এনইউ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় এবং তারা এইচএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ পায় বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের বিজ্ঞান শাখায়। কিন্তু তাদের কলেজে ভর্তির কোন টাকা ছিল না। এ বিষয়টি নিয়ে সেই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে যমজ তিন ভাইকে নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন সংবাদটি নজরে এলে তিন যমজ ভাইকে ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেন ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা সহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।
তিন জমজ ভাইয়ের মধ্যে মাফিউল হাসান গত বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং এবছর সাফিউল হাসান দিনাজপুর মেডিকেলে ও রাফিউল হাসান নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবার হওয়ায় তিন যমজ ছেলেদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সংগ্রামী মা আরজিনা বেগম।
আরজিনা বেগম বলেন, যমজ তিন সন্তান মেধাবী হলেও তাদের পড়ালেখা করানো নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। নিজে কষ্ট করে জমি বিক্রি করে ওদের পড়ালেখা করিয়েছি। তবুও ওদের ডাক্তার বানাবো যাতে আমাদের মত গরীব মানুষদের সেবা করতে পারে। কিন্তু মাঝেমধ্যে তাদের লেখাপড়া করানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। তারপরও সর্বস্ব বিক্রি করে হলেও তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
তবে অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কিভাবে তারা সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছালেন এবিষয়ে শাফিউল হাসান, মাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান বলেন, আমাদের সংগ্রামী মায়ের কারনেই তারা এপর্যন্ত আসতে পেরেছেন। দারিদ্রের কষ্টাঘাতে বেড়ে উঠলেও সাফল্যে দ্বারপ্রান্তে পৌছানো অনেকটাই কষ্টের ছিল। তারপরও মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি এজন্য সবার দোয়া চাই।
বগুড়া শাহ সুলতান কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম জানান, তিন যমজ ভাই মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
ধুনট সরকারি এনইউ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তফিজ উদ্দিন বলেন, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দোয়া নিতে এসেছিল। তাদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।