মাহমুদুল হাসান শুভ, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: অনুসন্ধানবার্তা
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে পশুর হাটগুলো। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ধর্মীয় ঐতিহ্য ও ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আগামী ১৭জুন ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কোরবানি করবেন মুসলিম সমপ্রদায়ের ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা।
কুরবানি উপলক্ষে পশু কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কাজিপুর উপজেলার কুরবানিদাতা ও ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় খুশি খামারি ও ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত এলাকা দিয়ে যেনো কোনভাবেই ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবির পক্ষ থেকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া খামারিরা এবার গরু মোটা-তাজাকরণে ওষুধ প্রয়োগ থেকেও বিরত রয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে সোনামুখিতে। এছাড়া দ্বিতীয় বৃহত্তম হাট বসে সদর উপজেলার আলমপুর পশুর হাট। সপ্তাহে একদিন রোববার সোনামুখি হাট বসলেও সপ্তাহে দু,দিন ঈদের আগে রবিবার ও বুধবার সোনামুখি হাটে পশু কেনা-বেচা হয়। এছাড়া কাজিপুর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়ভাবে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে পশুর হাট বসে। এই সব হাটে দেশীয় প্রজাতির বহু সংখ্যাক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল ওঠে। কিন্তু এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর খামারী ও ব্যবসায়িরা।
এছাড়াও ঈদের দুই থেকে ৩দিন আগে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ পশুর হাট বসবে বলে জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের পশুর দাম বেশি হওয়ায় হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যাক পশু থাকলেও বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেশ কম। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। যেকারণে এবারের কুরবানি ঈদে লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে গরুর চাহিদা একটু কম। তবে পশু হাট গুলোতে মাঝারি সাইজের গুরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে সাধ্যের মধ্যে না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা এবার বড় গরু কিনতে বেশী আগ্রহী নয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সোনামুখির পশুহাটে অন্যান্য বারের মতো চমকপ্রদ ও বিশালাকৃতির সারি সারি গরুর দেখা মেলেনি। হাতে গোনা কয়েকটি বড় সাইজের গরু হাটে তুললেও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রখর রোদে ও গরম দাড়িয়ে থেকে ক্রেতা না মেলায় তা ফিরিয়ে নিয়ে যান ব্যবসায়ী ও খামারীরা। এদিকে মাঝারি সাইজের খাসি ছাগল ১২থেকে ১৫হাজার এবং ত্রিশ কেজি ওজনের বড় সাইজের খাসি ছাগল ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে সোনামুখি পশুহাটে। এদিকে ২য় বৃহত্তর পশুর হাট আলমপুর হাটেও একই চিত্র চোখে পড়েছে।
স্থানীয় খামারিরা বলছেন, এবার পর্যাপ্ত দেশি জাতের গরু পালন করেছেন। গরুকে খাবার হিসেবে কাচা ঘাস, খৈল, চিটা গুড়, বিচলী, ভুসি, খুদ এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। আরো বলেন, কোরবানির পশুর দাম এবার বেশি হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ায় তাদের লাভের পরিমাণ কমবে। তবে, কেউ লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করবে না। ক্রেতারা এখন কিনলে কিছুটা কমে কিনতে পারবেন। কোরবানির হাটে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে পশু বিক্রি করবেন না। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের বাড়তি দামেই কিনতে হবে। গত কয়েক দশক ধরে কোরবানিতে বিশেষ করে ভারতীয় গরুর প্রাধান্য ছিল। তখন কোরবানি উপলক্ষ্যে গড়ে ২৪-২৫ লাখ গবাদি পশু দেশের বাইরে থেকে আসত। ধীরে ধীরে সেই চিত্র পাল্টেছে। সবশেষ কয়েক বছর দেশি পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। বাইরে থেকে গরু আনতে হচ্ছে না।
কাজিপুর সদরের এলাকার গরু খামারি মো: আব্দুল কাদের জানান, আমি ৩০ বছর ধরে গরু পালন করি, এবারের কোরবানি উপলক্ষে ১০, দেশি ষাঁড় গরু পুষেছি। এগুলো কোরবানির বাজারে উঠাবো এবং বাড়ি থেকে বিক্রি করব। আমার খামারে ৭০ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সব সাইজের দেশি গরু আছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি হওয়ায় ক্রেতার উপস্থিত কম।
সোনামুখি পশু কিনতে আসা আলমপুরের এক ব্যক্তি আমাদের বলেন, ২ ঘন্টা ধরে ঘুরছি কিন্তু দর-দাম ঠিক না হওয়ায় পশু কিনতে পারছিনা। এবারে গরু-ছাগলের দাম অনেক বেশি। তারপরও কিনতে তো হবেই। তিনি আরো বলেন, কয়েকটি খামার ও পশুর হাট ঘুরেছি গরু কেনার জন্য কিন্তু বাজেটে না কুলানোর জন্য এখনো কিনতে পারিনি।
সোনামুখি হাটে আসা ক্রেতা ফারুক মাষ্টার বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম একটু বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গুরু না আসায় খামারী ও ব্যবসায়িরা দেশি গুরুর দাম একটু বেশি হাকাচ্ছেন। যে কারণে বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি থাকলেও সে তুলনায় বিক্রি কম। তবে বড় সাইজের গরুর চেয়ে মাঝারী ও ছোট সাইজের গরুর এবার চাহিদা বেশি। সাথে সাথে ছাগলের বিক্রি তুলনামূলক বেশি।
এ বিষয়ে কাজিপুরে সোনামুখি হাটের ইজারাদার ফরিদুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহে ঈদে আগে সোনামুখি রবিবার ও বুধবার হাট বসে। রবিবার হাটের দিন ছিল, মোটামুটি কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। তবে আগামী রবিবার হাট আরও বড় হবে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। এবারের কোরবানির হাট জমে উঠেছে।