ধুনটে দৃষ্টি ফিরেছে উপজেলা কমপ্লেক্সসহ পরিষদ ভবন
বগুড়ার ধুনট উপজেলা মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেরামত কাজ পরিদর্শণ করেন ইউএনও আশিক খান। -অনুসন্ধানবার্তা

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনটে জরাজির্ণ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স সহ ইউনিয়ন পরিষদের ভবনগুলোর যেন দৃষ্টি ফিরেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের আওতায় সরকারি ভবনগুলো মেরামত করে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে।

জানাগেছে, ধুনট উপজেলা পরিষদ এর নতুন কমপ্লেক্স ভবন নির্মানের জন্য পুরাতন কমপ্লেক্স ভবনটি নিলামের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। উক্ত ভবনে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, উপজেলা সমাজ সেবা, মহিলা বিষয়ক, সমবায়, পরিস্খ্যংান, হিসাব রক্ষন কার্যালয় এর অফিস ছিলো। পরবর্তীতে উক্ত অফিস সমূহ উপজেলা ক্যাম্পসের ভিতর দুটি জরাজীর্ণ ও বসবাস অনুপযুক্ত ভবনে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ভবন সমূহ সেবা উপযোগী করার লক্ষে বিশেষ ভাবে বরাদ্দের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করা হয়। পরবর্তীতে বরাদ্দ সাপেক্ষে জরাজীর্ণ ও বসবাস অনুপযুক্ত ভবনগুলো মেরামত করে পরিষদের অফিস সমূহ সঠিকভাবে তাদের কার্যক্রম চলমান রাখতে পারছে।

৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দের সাপেক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর অফিস ভবন মেরামত, পরিষদের অভ্যন্তরীণ ২০০ মিটার সড়ক নির্মান, উপজেলা ক্যাম্পাসের ভিতরে বসার জায়গা ও শেড সহ ঘাট নির্মান, উপজেলা ইছামতী ভবন সংলগ্ন বিভিন্ন কার্যালয় মেরামত, মোটরসাইকেল শেড নির্মান, সমাজ সেবা ও মহিলা বিষয়ক অফিসারের দপ্তরে আগত মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেট নির্মান, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় মেরামত, উপজেলা পরিষদের জরাজীর্ণ ও বসবাস অনুপযুক্ত করতোয়া ভবন মেরামত, উপজেলা দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের গেট নির্মান ও শহীদ মিনার চত্ত্বরে গেট নির্মান, অফিসার্স ক্লাব, পরিষদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে রান্নার জন্য রান্নাঘর নির্মান সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে।

এছাড়া উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরীণ রাস্তা থাকার কারনে এতদিন পরিষদের ভিতরে যে ধুলাবালি উড়তো, একটু বৃষ্টিতে কাদা হতো সেটা বন্ধ হয়ে গেছে এবং দৃষ্টিনন্দন রাস্তা ও পুকুর সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। যে কারনে পরিষদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাছাড়া ধুনট উপজেলা পরিষদ এর মাধ্যমে সর্বমোট ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ধুনট সদর, মথুরাপুর, গোসাইবাড়ি, ভান্ডারবাড়ি, চৌকিবাড়ি, চিকাশী, এলাঙ্গী ও গোপালনগর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন মেরামত সম্পন্ন হয়েছে।

এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল কর্মকর্তা মনিরুল সাজ রিজন বলেন, কিছু কিছু ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থা এত টাই খারাপ ছিলো যে, সেখানে এস্টিমেট এর নির্ধারিত স্খ্যংার চেয়েও অধিক সংখ্যক দরজা জানালা সংস্কার করতে হয়েছে। অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের এর ছাদ দিয়ে পানি পড়ত, শেওলা ও ময়লা জমে রেইন ওয়াটার পাইপ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সবগুলো বাথরুম ছিলো অকেজো এবং ব্যবহার অনুপযোগী। পানির লাইন গুলো নষ্ট। ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে দীর্ঘদিন কোন মেরামত কাজ হয়নি এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও মেরামত এর জন্য কোন প্রকল্প এত দিন না নেওয়ার কারনে ইউনিয়ন পরিষদগুলো রীতিমতো জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিলো।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মেরামত কাজ করতে গেলে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ও স্বৈরাচারী মনোভাব সম্পন্ন জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন সময় ঠিকাদারদেরকে কাজে বাধা প্রদান করা সহ বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদান করতে থাকে। মূলত কাজটি তারা নিজেরা করে মোটা অংকের অর্থ লুট করার চিন্তা করেছিলেন।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এক ইউপি চেয়ারম্যান তার নিজের রুম ইন্টেরিয়র করার দাবী তুলেন এবং এই কাজ করলে তার ইউনিয়ন পরিষদের অন্য কোন রুম বা বাথরুম এর কাজ না করলেও সমস্যা নাই বলে জানান। কিন্তু উনার এই অযৌক্তিক দাবী রাখা হয়নি, বরং এস্টিমেট অনুযায়ী ঠিকাদারগন কাজ সম্পাদন করেন। সার্বিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উক্ত কাজ সমূহ তদারকি করেন এবং উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে যৌথভাবে কাজ সমূহ পরিদর্শন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার উক্ত মেরামত টেন্ডারের কাজ বাদে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের আর কি কি কাজ তাদের ইউনিয়ন পরিষদে কি করা প্রয়োজন তার লিস্ট গ্রহণ করেন এবং উপজেলা প্রকৌশলীকে তার বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান বলেন, ধুনট উপজেলাকে একটি দূর্র্ণীতিমুক্ত মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাই এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।