বগুড়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নোটিশের পরও অনড় অতিরিক্ত সচিব

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা:
সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় কলা গাছের বাগান ও ধানের চাতাল করেছেন হাইয়ুল কাইয়ুম নামে সাবেক এক অতিরিক্ত সচিব। অবসরে গিয়েও তিনি সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে ইটের ঘর নির্মাণ করেছেন। বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাটে ট্রাক টার্মিনাল করার নির্ধারিত জায়গা থেকে ওই অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়ে সাবেক সরকারি ওই কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে পাঁচ দিনের সময় বেধে দেয়া হয়। বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ নোটিশের পর নির্ধারিত সময় গেলেও অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার সেখানে সীমানা নির্ধারণের পর চিহ্ন খুঁটি দেয়া হয়েছে। এরআগে গত সোমবার (৭ আগস্ট) বগুড়া সওজ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আমানউল্লাহ আমান স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, সরকারি অধিগ্রহণকৃত জায়গায় অবৈধভাবে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ করে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মহাসড়ক আইন অমান্য করেছেন। এ বিষয়ে মৌখিকভাবে নিষেধ করার পরও স্থাপনা অপসারণ না করে তিনি বে-আইনী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা পাঁচ দিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করাসহ মহাসড়ক আইন অনুয়ায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সাবেক ওই সরকারি কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

অবৈধ স্থাপনাটি নোটিশের পাঁচ দিনের মধ্যে অপসারণ করা হলো কিনা, পর্যবেক্ষনপূর্বক বগুড়া সওজ বিভাগকে অবহিত করার জন্য সড়ক শাখা-২ শেরপুর উপ-বিভাগ বগুড়ার উপ-সহকারি প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নোটিশে বেধে দেয়া পাঁচ দিনের সময় পার হলেও অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করেননি কুন্দারহাটের বাসিন্দা সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাইয়ুল কাইয়ুম।

তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বিসিআইসির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অবসরে যান। তিনি নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম এলাকার মৃত আইনজীবি দেলোয়ার হোসেন মুক্তারের ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকার মহাসড়কের পূর্বপাশে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে দখল করে কলা গাছের বাগান ও পেছনে ধানের চাতাল করা হয়েছে। হঠাৎই ইট দিয়ে দোকান ঘর নির্মাণকাজ করতে দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা।

জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ডের পূর্বপাশে ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। জায়গাটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সেখানে একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলো স্থানীয় প্রশাসন।

আন্ত:জেলা ট্রাক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নন্দীগ্রাম ড্রাইভার শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় তিন শতাধিক পরিবহন থাকলেও কোনো টার্মিনাল নেই। কুন্দারহাটের ওই জায়গাটি ট্রাক টার্মিনাল করার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানান এই শ্রমিক নেতা।

সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাইয়ুল কাইয়ুম বলেন, সরকারি ওই জায়গাটির তিনপাশে তার জায়গা রয়েছে। সরকারি জায়গাটি শুধু সংরক্ষন করার জন্য কলাগাছ লাগিয়ে রেখেছেন। অল্প কিছু সরকারি জমিতে দোকান ঘর নির্মাণ করছেন। সরকার চাইলেই ওই জমি ফেরত দিয়ে দিবেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মো: আসাদুজ্জামান বলেন, সড়ক বিভাগের সরকারি জমি দখল করে দোকান ঘর নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে সাবেক ওই সরকারি কর্মকর্তাকে প্রথমে মৌখিক এবং পরে লিখিতভাবে নোটিশ করা হয়েছে। সেখানে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে তার স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে, অন্যথায় স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হবে।